উত্তরবঙ্গে অতিবৃষ্টি, দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টি হওয়ায় কার্যত খরা পরিস্থিতি
প্রকৃতির খামখেয়ালি একদিকে উত্তরবঙ্গে যখন বন্যা পরিস্থিতি, দক্ষিণবঙ্গে তখন কার্যত খরা। অঝোর বৃষ্টিতে যেখানে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে উত্তরের নদীগুলো, প্রবল স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি, ভাঙছে ঘর, আশ্রয়হীন হাজার হাজার মানুষ, অন্যদিকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরিমাণ ৫০ শতাংশ ছুঁতে চলেছে। পরিস্থিতি এমনই যে, আর কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে সম্পূর্ণ নষ্ট হবে খারিফ শস্য চাষ।
হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমান সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কেবলমাত্র হুগলি জেলাতেই এখনও পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশ। নদিয়ায় বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ৫৫ শতাংশ। বাঁকুড়ায় ৫৪ শতাংশ, পূর্ব মেদিনীপুরে ৫০ শতাংশ, বীরভূমে ৪৮ শতাংশ, বর্ধমানে ৪৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং দার্জিলিংয়ে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ।
প্রখর রোদে কার্যত খরা পরিস্থিতি, দোসর হিসেবে জুটেছে সেচের জলের অভাব। পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে পানীয় জলেরও সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করেছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিশাল এলাকায়।
গত বছর এই সময়ে রাজ্যে ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমিতে খরিফ শস্য চাষ হয়েছিল। এবার সেখানে খরিফ শস্য চাষ হয়েছে ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৭৭ হেক্টর জমিতে। বীজতলা ৯০ শতাংশ হলেও মাত্র ৭.৮২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বৃষ্টি না নামলে আমন চাষও বিপর্যস্ত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের। ফসল নষ্টের আশঙ্কা রাজ্যের উত্তরাংশেও। তবে সেখানে বন্যা পরিস্থিতির জেরে বিঘার পর বিঘার ফসল নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে শ্রাবণ মাসে একদিকে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গে ফসল নষ্টের কারণ বৃষ্টিপাতের প্রবল অভাব।
এদিকে মৌসম ভবনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের স্থলভাগে এখনও প্রায় ২০ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছ এলাকার। সেখানে ১৬ ই জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ঘাটতি পৌঁছেছে ৬০ শতাংশে। তারপরেই আছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, হরিয়ানা এবং কেরলের বিস্তীর্ণ এলাকা। একই সময় মারাঠাওয়াড়া, বিদর্ভ, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং তামিলনাড়ুতে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ৩০-৩৫ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভা দাবি জানিয়েছে, খরা ঘোষণা সংক্রান্ত নিয়মাবলীতে পরিবর্তনের। তাদের দাবি, বর্তমানে ২০১৬ সালের নিয়মাবলীতে বদল অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, ঘাটতিপূর্ণ বৃষ্টিপাত যে যে এলাকায় হয়েছে, সেখানকার কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারকে আবেদনও জানিয়েছে কৃষক সভা।
এদিকে আবহাওয়া দফতর আগামী ৩-৪ দিন পশ্চিমবঙ্গ সহ মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পূর্বাভাস মতো বৃষ্টি হলে এবছরের মতো ফসল বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন কৃষকরা। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তার কী হবে? সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
Comments are closed.