সাংসদ হওয়া এবং বিয়ের পর প্রথম পুজো অভিনেতা নুসরত জাহানের। পুজোতে কোথাও দেখা গিয়েছে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর ঢাক বাজানোর ছবি আবার কোথাও অঞ্জলি দেওয়ার। আর পাঁচজন বাঙালিকে দুর্গাপুজোয় ঠিক যেভাবে এবং যে বেশে দেখা যায়, বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরতকেও সেভাবেই মণ্ডপে মণ্ডপে দেখা গিয়েছে আনন্দে মেতে উঠতে।
আর নুসরতের এই পুজো যাপন নিয়ে যথারীতি শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধুন্ধুমার। কেউ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে ধর্মের রঙে রাঙিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর শারদ উদযাপন নিয়ে! আবার কেউ নুসরতের পুজোর আনন্দ দেখে আশঙ্কায় পড়েছেন ইসলামের বিপন্নতা নিয়ে, দিয়েছেন ফতোয়া। এমনকী দিয়েছেন প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ নুসরতের পাশে দাঁড়ালেন লেখক তসলিমা নাসরিন। তৃণমূল সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে ট্যুইটে নিশানা করলেন মুসলিম কট্টরপন্থীদের। এবং একইসঙ্গে প্রথমবার ঢুকে পড়লেন এপার বাংলার রাজনীতিতেও।
নবমী দিন, ৭ ই অক্টোবর বিকেলে লেখক তসলিমা নাসরিন একটি ট্যুইট করেন। লজ্জা, দ্বিখণ্ডিতর লেখক তাতে লেখেন, একজন অমুসলিম হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অন্যান্য মুসলিমদের মতো হিজাব পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, তখন ইমামরা তাঁর কাজকে ধর্মনিরপেক্ষতা হিসেবে প্রশংসা করতে থাকেন। কিন্তু একজন অহিন্দু হিসেবে যখন নুসরত জাহান অন্যান্য হিন্দুদের মতোই পুজোয় নাচ করেন এবং মণ্ডপে প্রার্থনায় অংশ নেন, তখন মুসলিম ইমামদের মুখ গোমড়া হয়ে যায় এবং নুসরতের কাজকে ইসলামের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করতে থাকেন।
এরপরই তসলিমার ট্যুইটের সূত্র ধরে যথারীতি পুজো-বিতর্কেও ঢুকে পড়েছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথা বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়। এর আগে সাম্প্রতিক প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাব বজায় রেখে মূলত বাংলার শাসক দলের নেত্রীকে নিশানা করেছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল। এবার তথাগত রায় ঢুকে পড়লেন নুসরত বিতর্কেও। একটি আনভেরিফায়েড ট্যুইটার হ্যান্ডলকে ট্যাগ করে দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহদের পূর্বসূরী লিখেছেন, এবার ব্যাপারটা প্রকাশ্যে চলে এল। তসলিমা নাসরিনের পর এবার নুসরত জাহানকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হল? কিন্তু কেন?
বাংলার রাজনৈতিক হোক কিংবা সামাজিক বিষয়, ইদানীং তথাগত রায়ের বিতর্ক উসকে দেওয়া ট্যুইট না দেখলেই অবাক হন নেটিজেনরা। কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, নুসরতের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়ে, কার্যত এপার বাংলার রাজনীতিতেও বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিনের প্রবেশ। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবল বিক্ষোভের মুখে কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল তসলিমাকে। তারপর বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন তসলিমা নাসরিন। কিন্তু বাংলার রাজনীতি নিয়ে সরাসরি কখনওই মুখ খোলেননি অধুনা ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত লেখক। নবমীর বিকেলে যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে নুসরতের পাশে দাঁড়িয়ে ইসলামি ইমামদের একহাত নিলেন তসলিমা এবং সেই বক্তব্য রিট্যুইট হল মেঘালয়ের রাজ্যপালের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে, তাতে অন্য ইঙ্গিত দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
তৃণমূল অবশ্য এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। দলের মত, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত আচার আচরণের স্বাধীনতা রয়েছে। তাতে হস্তক্ষেপ করা অনুচিত বলেই মনে করেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
Comments are closed.