দলিত উগ্রপন্থার মাধ্যমে মাওবাদী কায়দায় বিপ্লবী অভ্যুত্থানের ছক, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ভারাভারা, তেলতুম্বডের বিরুদ্ধে এনআইএর চার্জশিট

এলগার পরিষদ মামলায় নয়া মোড়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে ভারতে দলিত উগ্রপন্থার মাধ্যমে বিপ্লবী অভ্যুত্থানের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন জেলবন্দি সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ আনন্দ তেলতুম্বডে। সম্প্রতি এনআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ হওয়া সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে মামলার এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী এই বয়ান দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সূত্রের খবর মোট ৬ জন সাক্ষীর বয়ান অতিরিক্ত চার্জশিটে যুক্ত করা হয়েছে। তবে সাক্ষীদের নাম, ঠিকানা গোপন রেখেছে এনআইএ।
সাক্ষীদের দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, ফিজি, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে শিক্ষাবিদ হিসেবে যাতায়াত ছিল তেলতুম্বডের। সেখানে মাওবাদী ভাবধারা প্রচারের কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে এক সাক্ষীর দাবি তুলে ধরা হয়েছে এনআইএর অতিরিক্ত চার্জশিটে।
এছাড়া অশীতিপর কবি তথা সমাজকর্মী ভারাভারা রাওয়ের বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক অভিযোগের দাবি রয়েছে এলগার পরিষদ চার্জশিটে। বলা হয়েছে মাওবাদীদের নেতৃত্বে দেশে বিপ্লব সংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন ভারাভারা রাও। মহিলাদের মধ্যে মাও ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন আর এক জেলবন্দি শিক্ষাবিদ সোমা সেন। হানি বাবু, রোনা উইলসনদের উপর ভার ছিল ছাত্র সমাজের মধ্যে মাও রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার।
অতিরিক্ত চার্জশিটে এনআইএর চাঞ্চল্যকর দাবি, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিসগঢ় থেকে বছরে প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে মাওবাদী পার্টি। চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই টাকায় দেশজুড়ে মাওবাদী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। কিন্তু কারা দিচ্ছেন টাকা?
এনআইএ চার্জশিটে দাবি করেছে, এক সাক্ষী তাদের জানিয়েছেন, সিপিআই মাওবাদী আদিবাসী ও ব্যবসায়ীদের প্রতি ব্যাগ তেন্দু পাতার জন্য ৩৫০ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। এক একটি এমন ব্যাগে থাকে হাজারটি বান্ডিল। এছাড়া এলাকায় কর্মরত সমস্ত ঠিকাদারকে মাওবাদীদের জঙ্গল ট্যাক্স দিতে হয়। আদিবাসীরাও বছরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা মাওবাদী পার্টিকে দেয় বলে দাবি এনআইএর। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, বাঁশের কারবারিদের কাছ থেকেও একইভাবে কর আদায় করে মাওবাদীরা। শহরের দোকানদার বা ব্যবসায়ীরাও মাওবাদীদের অর্থ সাহায্য করে থাকে।
চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, মাওবাদীরা সাধারণত নিরাপত্তা রক্ষীদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে তা ব্যবহার করে। পাশাপাশি নিজেরাও অস্ত্র শস্ত্র তৈরিতে দিয়েছে বলে দাবি এনআইএর। এক সাক্ষীর বয়ানে উঠে এসেছে, বেআইনি খনি থেকে জিলেটিন স্টিক তৈরি আয়ত্ব করে ফেলেছে মাওবাদীরা। সোডা ও সালফার ব্যবহার করে সাধারণ বিস্ফোরক থেকে শুরু করে ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে আইইডি বিস্ফোরক তৈরিও সিপিআই মাওবাদীর কাছে জলভাত বলে এনআইএর কাছে এক সাক্ষী দাবি করেছেন।
মাওবাদীরা কথা বলার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। ই-মেল কিংবা ওই ধরনের কোনও কাজ করা হয় মিলিশিয়ার কোনও সদস্যের মোবাইল ব্যবহার করে। নিজেদের মধ্যে ওয়াকিটকির মাধ্যমে কথাবার্তা চালান মাওবাদীরা।
এই চার্জশিটে শিক্ষাবিদ আনন্দ তেলতুম্বডের ভাই মিলিন্দ তেলতুম্বডে ওরফে সাহিলকে নিয়েও কিছু তথ্য রয়েছে। মাওবাদী আন্দোলন বন-জঙ্গলের সীমানা ছাড়িয়ে কীভাবে শহরাঞ্চলেও ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আনন্দ তেলতুম্বডের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হোত ভাই মিলিন্দের।
আইনজীবীদের একটি অংশ মনে করছেন, ভীমা কোরেগাঁও মামলা শুরুর দিকে তদন্তকারী পুণে পুলিশ দাবি করেছিল, নির্বাচিত মোদী সরকারকে উৎখাত করার জন্য ভীমা কোরেগাঁওয়ে জমায়েত হয়েছিলেন মাওবাদী সমর্থকেরা। উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা দখল। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। অভিযুক্তরা যেমন জেল থেকে জামিন পাননি তেমনই তদন্তকারী সংস্থাও রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের ব্লু প্রিন্ট আদালতের সামনে হাজির করতে পারেনি। এবার দলিত অভ্যুত্থানের পক্ষে সওয়াল করেছেন বলে জেলবন্দি শিক্ষাবিদ আনন্দ তেলতুম্বডের বিরুদ্ধে এক সাক্ষীর বয়ান অতিরিক্ত চার্জশিটে যুক্ত করা হলেও, আদালতের চার দেওয়ালের মধ্যে এনআইএ তা কতটা প্রমাণ করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান আইনজীবীদেরই একাংশ।

Comments are closed.