Epidemic Disease Act: কারা আছেন মহামারী আইনের আওতায়? কারা হবেন দোষী?

বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারি ঠেকাতে লকডাউনের আবহে জারি রয়েছে ‘The Epidemic Disease Act 1897’  বা ‘মহামারি আইন’। কিন্তু কী আছে এই শতাব্দী প্রাচীন আইনে? এই আইন প্রয়োগের তাৎপর্যই বা কী ?

বিশ্বজুড়ে হাহাকার ফেলেছে করোনাভাইরাস, চলছে মৃত্যুমিছিল। ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর মধ্যে দিয়ে যে প্রক্রিয়ার শুরু, ২১ দিন বেড়ে তা পুরোদস্তুর লকডাউনের চেহারা নিয়েছে। গোটা বিশ্বেই থমকে গিয়েছে চাকা।

এই পরিস্থিতিতে লকডাউনকে সফল করে তুলতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হল মানুষের সচেতনতা। সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের যথাযোগ্য প্রয়াস। যাতে ঘরবন্দি থাকতে ন্যূনতম সমস্যা পোহাতে না হয় মানুষকে। কিন্তু এর মধ্যেও নিয়ম ভঙ্গকারীদের দেখা মিলছে নিত্য। মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রতিটি সচেতন মানুষকে অগ্রাহ্য করে তারা বিনা মতলবে ঘুরছেন পথে ঘাটে। জমিয়ে আড্ডা চলছে ফাঁকা রাস্তায়। কোথাও চলছে ক্রিকেট।

যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে এই ধরনের উপদ্রবকে গোড়াতেই শায়েস্তা করতে সরকারের হাতে রয়েছে ১২৩ বছরের পুরনো মহামারি প্রতিরোধ আইন।

 

কী আছে এই Epidemic Disease Act – ?

Epidemic Law in India

মহামারী আইনের সেকশন ২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে। সেকশন ২ বলছে, কোনও ধরনের রোগের ছড়িয়ে পড়া রুখতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে এবং জনজীবনে প্রয়োজনীয় বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারে।

এই আইনের সেকশন ২ বলছে, যদি কোনও ভয়ঙ্কর রোগ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার মনে করে সাধারণ নিয়ম বিধি এক্ষেত্রে কার্যকরী হচ্ছে না। তাহলে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে এই বিশেষ আইনের প্রয়োগাধিকার দিতে পারে রাজ্য সরকার।

Epidemic Act সেকশন ২’য়ে স্পষ্ট করা আছে, রেল কিংবা অন্য কোনও মাধ্যমে যাত্রা করা কোনও ব্যক্তিকে দেখে যদি সরকারের মনে হয়, রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সেই ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিধি নিষেধের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। তাঁকে পৃথক রেখে চিকিৎসার বন্দ্যোবস্ত করবে সরকার। এই আইন অমান্যে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা প্রয়োগ করে শাস্তির সংস্থান রয়েছে।

Epidemic Law in India, ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১৮৮ নম্বর ধারা’র আওতায় বলছে, এই ধারা লঙ্ঘনে কোনও ব্যক্তির সাধারণভাবে সর্বোচ্চ ১ মাসের জেল এবং ২০০ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা দুই-ই একসঙ্গে হতে পারে। এই Epidemic Disease Act এর প্রয়োগকর্তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না বলেও রক্ষাকবচ প্রদান করা আছে শতাব্দী প্রাচীন এই আইনে।

 

সাম্প্রতিক অতীতে Epidemic Disease Act –এর প্রয়োগ

  • ২০১৮ সালে গুজরাতের গ্রামে কলেরার প্রকোপ রুখতে জারি হয়েছিল এই আইন
  • ২০১৫ সালে চণ্ডীগড়ে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় জারি হয়েছিল এই আইন
  • ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পুণেতে জারি করা হয় এই আইন

 

কীভাবে এল Epidemic Disease Act?

১৮৯০ সালের শেষদিকে তৎকালীন বম্বেতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয়। রোগের ভয়ে শহর থেকে পালিয়ে যান বহু মানুষ। আর বাকিরা পড়ে থাকেন মৃত্যুমিছিল দেখতে কিংবা তাতে সামিল হতে।

তা বলে গবেষণা তো আর বন্ধ ছিল না। ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে বম্বেতে গবেষণায় প্রথম ধরা পড়ে প্লেগের একটি বিশেষ ধারার কথা। নাম দেওয়া হয় বুবোনিক প্লেগ। কিন্তু সেই সময় রোগ এতই ছড়িয়ে পড়েছিল, যে মৃত্যুমিছিল ঠেকানো যায়নি।

 

কত লোকের মৃত্যু?

বম্বে প্লেগে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। তবে একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। তা হল, সেপ্টেম্বরে ধরা পড়ার পর বুবোনিক প্লেগের শিকার হয়ে সপ্তাহে গড়ে ১৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর এটা চলেছিল ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস ধরে। এবার হিসাব করে নিন।

তারপরই এমন আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করে ভারতের শাসনকর্তা ব্রিটিশ সরকার। তার পরের বছরই তৈরি হয় The Epidemic Disease Act, 1897.

 

Comments are closed.