ইউরোপ, আমেরিকায় বাতিল হলেও ভারত সহ মাত্র ৪ দেশে ব্যবহার হয় ইভিএম, এবার এখানেও প্রশ্নের মুখে ইভিএম ব্যবহার

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন, সংক্ষেপে ইভিএম। লোকসভা ভোটের পর এই ইভিএমই প্রশ্নের মুখে। প্রশ্ন একটাই, ইভিএমে কি কারচুপি সম্ভব? নির্বাচন কমিশনের দাবি, ইভিএমে কারচুপি সম্ভব নয়। ইভিএম হ্যাক করে দেখানোর ওপেন চ্যালেঞ্জও দিয়েছে তারা। কিন্তু তাও ইভিএম বাতিলের দাবি তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিরোধীরা। এমনকী ভোটের পর ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও। সত্যিই কি ইভিএম বিশ্বাসযোগ্য?

ভারতে ইভিএম ব্যবহার
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় মানুষের ভোটদানকে আরও নিরাপদ, সহজ এবং নির্ঝঞ্ঝাট করতে ১৯৮২ সালে ভারতে প্রথম ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেরলের পারুর বিধানসভা আসনে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয় ইভিএম।
যদিও এরপরও ব্যালটেই চলতে থাকে ভোট প্রক্রিয়া। তবে বিভিন্নভাবে মেশিনটিকে আরও নিরাপদ করে তুলে ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে বাছাই করা কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয় ইভিএম। সাফল্য পায় নির্বাচন কমিশন। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে সারা দেশে সমস্ত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়।
ভারতে যে ইভিএম ব্যবহার করা হয় সেগুলোর প্রত্যেকটি ২ হাজার করে ভোট রেকর্ড করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের টেকনিকাল এক্সপার্ট কমিটির তত্ত্বাবধানে ইভিএম ডিজাইন করেছে বেঙ্গালুরুর ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড এবং হায়দরাবাদের ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া। ইভিএম চালাতে প্রয়োজন হয় না বিদ্যুতের, মেশিনের ভেতরেই রাখা থাকে ব্যাটারি। ফলে বিদ্যুৎ নেই এমন জায়গাতেও অনায়াসে কাজ করতে পারে ইভিএম। ইভিএমের ব্যালট ইউনিটে এক সঙ্গে ১৬ জনের নাম নথিভুক্ত করা যায়। বেশি প্রার্থী হলে অতিরিক্ত আরও ৩ টি ব্যালট ইউনিট যুক্ত করা যায় ইভিএমের সঙ্গে। সর্বোচ্চ ৬৪ জন প্রার্থীর হয়ে ভোট নিতে পারে এক একটি ইভিএম।

বিশ্বে ইভিএম নির্ভরতা
শুধু ভারতই না, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বারবার ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ ইভিএম বাতিল করে ফের ব্যালটে ফিরেছেন আবার কেউ আংশিক ব্যবহারেই ইভিএমকে আবদ্ধ রেখেছেন। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় যেখানে ইভিএমকে স্থায়ীভাবে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বড় বড় কিছু দেশ এখনও ইভিএমেই আস্থা রাখছে।
এই সংক্রান্ত একটি স্বীকৃত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারা বিশ্বে মোট ৩১ টি দেশ ইভিএম নিয়ে গবেষণা কিংবা ব্যবহার করেছে। তার মধ্যে মাত্র ৪ টি দেশ তা দেশজুড়ে ব্যবহার করেছে। ১১ টি দেশ বিচ্ছিন্নভাবে সামান্য কতগুলি ক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করছে। ৫ টি দেশ পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ইভিএম ব্যবহার করছে, তার মধ্যে ৩ টি দেশ ইতিমধ্যেই ব্যবহার বন্ধও করে দিয়েছে। ১১ টি দেশ যারা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ইভিএম ব্যবহার শুরু করেছিল, তারা তা স্থগিত করেছে। অর্থাৎ, সেই দেশগুলোতে বর্তমানে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে না।
ইংল্যন্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভোটে ইলেক্ট্রোনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার নিষিদ্ধ। মার্কিন দেশে ইমেল কিংবা ফ্যাক্সের মাধ্যমে ভোট দান বৈধ, তবে ইভিএমে সরাসরি অনাস্থা দেখিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ।
২০০৬ সালে অক্টোবর মাসে নেদারল্যান্ডসে ইভিএম নিষিদ্ধ হয়। ২০০৯ সালে নেদারল্যান্ডসের পথে হেঁটে ইভিএম বাতিল করে ইতালি এবং আয়ারল্যান্ড। ২০০৯ সালেরই মার্চে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত ঐতিহাসিক রায়ে বলে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অসাংবিধানিক। তারপর সে দেশেও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ইভিএম ব্যবহার।
প্রথম বিশ্বের দেশগুলো যতোই ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফিরুক না কেন, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ এখনও ইভিএমেই আস্থা রাখছে। ভারতের মতোই ব্রাজিলেও ভোট নেওয়া হয় ইভিএমেই। পাশাপাশি ফিলিপিন্স, ইউএই, বেলজিয়াম, ভেনেজুয়েলা, ইজিপ্ট, নামিবিয়া, নেপাল, ভুটানে ভোট হয় ইভিএম ব্যবহার করে।

Comments are closed.