২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ এর জুন। ৪ বছর ভারতের মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার পদে ছিলেন যিনি। অবসর নেওয়ার পরে সেই কে ভি চৌধারীই যোগ দিলেন মুকেশ আম্বানীর রিলায়েন্সে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে খবর, কে ভি চৌধারী সংস্থায় নন এক্সিকিউটিভ অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। আর এই নিয়োগের সমালোচনায় মুখর হয়েছে কংগ্রেস, বামেরা। বিজেপি অবশ্য এতে বিতর্কের কোনও কারণ দেখছে না।
ইন্ডিয়ান রেভেনিউ সার্ভিস অফিসার কে ভি চৌধারীই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আইএএস অফিসার না হয়েও ২০১৫ সালের জুন মাসে ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এই দফতরের কমিশনার পদে এতদিন সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারদেরই নিয়োগ করা হত।
ভারতের চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার পদে থাকার সময় একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন কে ভি চৌধারী। ২০১৮ সালে সিবিআই মামলায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল।
২০১৮ এর শেষদিকে সুপ্রিম কোর্ট সিভিসিকে নির্দেশ দিয়েছিল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এ কে পট্টনায়কের তত্ত্বাবধানে তৎকালীন সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করার। সেবছরই ১৬ ই নভেম্বর সিভিসি রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট অলোক ভার্মার কাছে মুখবন্ধ খামে জবাব তলব করে।
নিউজ পোর্টাল thewire-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অলোক ভার্মা সেই সময় কে ভি চৌধারীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গুরুতর অভিযোগ করেন এবং সিভিসির সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শীর্ষ আদালতকে তিনি বলেন, ‘সিভিসি আমাকে যে ধরণের প্রশ্ন করেছিলেন, তা শুনে আমি স্তম্ভিত। মনে হচ্ছিল, যেন আমাকে ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়ে গিয়েছে এবং আমি যে নিরপরাধ, তা প্রমাণ করতে হবে। অথচ হওয়া উচিত ছিল ঠিক উল্টোটা’। শীর্ষ আদালতকে ঠিক এই ভাষাতেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৎকালীন সিবিআই প্রধান।
এখানেই শেষ নয়, ভার্মা তাঁর লিখিত জবাবে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে আমলা মহলে পরিচিত রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে তাঁর করা সমস্ত বিরোধিতামূলক মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য কে ভি চৌধারী তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
রঞ্জিত সিনহার আমলেও সিবিআই তদন্তে চৌধারীর নাম উঠে আসে। আবার মাংস ব্যবসায়ী মঈন কুরেশির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তেও চৌধারী হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিলেন বলে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানান সিবিআইয়ের ডিআইজি মণীশ সিনহা। আবার কে ভি চৌধারীর রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে অলোক বর্মাকে সরিয়ে দেয় মোদী সরকার।
সিভিসি হওয়ার আগে কে ভি চৌধারী ছিলেন আয়কর বিভাগে। পরে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেশন বা সিবিডিটির চেয়ারপার্সন হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রত্যক্ষ কর বিভাগের চেয়ারপার্সন কে ভি চৌধারীর আমলেই প্রকাশ্যে এসেছিল সাহারা-বিড়লা পেপার্স। সেই পেপারে ইঙ্গিত ছিল দেশের সিনিয়র রাজনীতিবিদরা ঘুষ নিয়েছিলেন।
এমনকী সিভিসি হিসেবে চৌধারীর নিয়োগকে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বিজেপিরই শীর্ষ নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, সিনিয়র আইনজীবী রাম জেঠমালানি, প্রশান্ত ভূষণরা। সিভিসি হিসেবে তাঁর নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়। কিন্তু বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ মামলাটি খারিজ করে দেন।
এবার সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েই যেভাবে কে ভি চৌধারী দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থার বোর্ডে ঢুকে পড়লেন, তা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সিভিসি কিংবা সিবিডিটি চেয়ারপার্সন থাকাকালীন রিলায়েন্সের বিরুদ্ধে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা রিভিউ করার দাবি জানিয়েছে বামেরা। রিলায়েন্সে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসও।
Comments are closed.