এক পোস্টেই মুশকিল আসান, ফেসবুক গ্রুপগুলো যেন আজকের সিধু জ্যাঠা 

তদন্তে সমস্যার মুখোমুখি হলে ফেলুদা সটান গিয়ে হাজির হতেন সিধু জ্যাঠার কাছে। সত্যজিতের সিধু জ্যাঠা বাঙালির কাছে যেন রক্তমাংসের এনসাইক্লোপিডিয়া। যাঁর কাছে সব প্রশ্নের উত্তর মজুত রয়েছে। প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট কার্যত সিধুজ্যাঠার ভূমিকা নিয়েছে। যদিও অনেক সময় অনেক প্রশ্নের ‘সঠিক’ জবাব ইন্টারনেটও দিতে পারেনা। ধরুন অফ-বিট কোনও জায়গায় ঘুরতে যাবেন, বা এমন কোনও বই যা গোটা কলেজ স্ট্রিট খুঁজেও পাচ্ছেন না। অথবা অপরিচিত কোনও রান্নার রেসিপি, এসব ক্ষেত্রে আজকাল আমরা অনেকেই ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের দ্বারস্থ হচ্ছি। খাওয়ারের রিভিউ থেকে শুরু করে অফ-বিট ডেস্টিনেশনের হালহকিত সব কিছুই মিলছে এই গ্রুপগুলিতে। 

সমস্যায় পড়লেই সংশ্লিষ্ঠ ফেসবুক গ্রুপগুলিতে গিয়ে নিজের প্রশ্নটি পোস্ট করে দিন। ব্যাস একটি পোস্টেই আপনার সব সমস্যার সমাধান। ঘোরা-বেড়ানো, খাওয়া দাওয়া, বইপত্র, হস্তশিল্প থেকে শুরু করে একাধিক বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ফেসবুক গ্রুপগুলি। যার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন এক বা একাধিক এডমিন। TheBengalstory সেরকমই কয়েকটি গ্রুপের এডমিনদের সঙ্গে কথা বলল। 

Calcutta Foodies Club এমনই একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। সারাদিনই খাওয়াদাওয়া সংক্রান্ত অসংখ্য পোস্ট এই গ্রুপে হয়ে থাকে। গ্রুপ এডমিনদের একজন চন্দন গুপ্ত জানালেন, বর্তমান এই গ্ৰুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ মতো। তিনি আরও জানান, সিএফসি খাওয়ারের গ্ৰুপের পাশাপাশি একটি রেজিস্ট্রার্ড চ্যারিটেবল  ট্রাস্টও। সারা বছরই গ্ৰুপের সদস্যরা একাধিক সামাজিক কাজ করে থাকেন। যার মধ্যে অন্যতম, সারা বছর উল্টোডাঙায় পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল চালানো হয় গ্রুপের উদ্যোগে। পাশাপাশি সুন্দরবনের দুর্গম জি প্লটেও স্থানীয় শিশুদের জন্য স্কুল খোলার পরিকল্পনা করছে। চন্দন জানালেন, আম্ফান ঝড়ের সময় গ্ৰুপের  সদস্যরা চাঁদা তুলে ১৫ হাজার পরিবারের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিলেন।

ফেসবুকে ট্রাভেল গ্রুপগুলির মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় Weekend tours from Kolkata গ্রুপটি। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস ব্যানার্জি চাকরি থেকে অবসরের পর ২০১৪ সালে সেপ্টম্বর মাসে গ্রুপটি তৈরি করেছিলেন। বর্তমানের এর সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ। সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে কাছাকাছি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছেন অথচ কোথায় যাবেন ঠিক করতে পারছেন না। এমন সময় গ্রুপটিতে গিয়ে একটি পোস্ট করলেই সমস্যার সমাধান। দেবাশিস বাবু জানান, রোজই ট্যুর সংক্রান্ত প্রায় ৫০০ টি পোস্ট হয় এই গ্রুপ থেকে। সময়ের অভাবে বেড়াতে যেতে না পারলেও এই গ্রুপটি থেকে একবার ঘুরে আসতে পারেন। হাজার হাজার ছবি ভিডিও দেখে আপনার ভার্চুয়াল ভ্রমণ হতে পারে। অবসর কাটাতে গ্রুপটি তৈরি করলেও দেবাশিস বাবু বললেন, বর্তমানে সকাল ৯ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত গ্রুপ সক্রান্ত কাজ করেই তাঁর সময় কেটে যায়। 

বই নিয়ে তৈরি গ্রুপগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মলাট। এখানে মূলত যে কোনও পুরোনো বই পিডিএফ ফর্ম্যাটে পাওয়া যায়। মলাটের এডমিন রোহিত সেন জানান, ২০১৬ সালের ১৬ অক্টবর থেকে এই গ্রুপের পথ চলা শুরু। মূলত বই পড়াকে আরও জনপ্রিয় করতেই মলাট তৈরি হয়। বইয়ের পিডিএফ-এর পাশাপাশি নতুন বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া, বই সংক্রান্ত নানান আলোচনা হয়ে থাকে। 

    

Comments are closed.