ভারত-পাক সেনা অফিসারদের ভুয়ো ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে কাশ্মীর নিয়ে বিস্ফোরক-মিথ্যার প্রচার, বাড়ছে বিভ্রান্তি
৫ ই অগাস্ট ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়ে গিয়েছে তুমুল বিতর্ক। এরই মধ্যে অত্যন্ত কৌশলী উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ছবি এবং তথ্য, যা বাস্তবের সঙ্গে প্রকৃত অর্থেই সম্পর্কহীন। যার জেরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভ্রান্তি।
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সামরিক পদস্থ কর্তাদের নামে পর্যন্ত ভুয়ো ট্যুইটার হ্যান্ডেল খুলে ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন মনগড়া বিস্ফোরক মিথ্যা। যা থেকে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে। শুধু ভারতীয় সেনাই নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসারদের নামেও এমনই ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এরকমই একটি ঘটনা সামনে আসে গত ১৬ ই অগাস্ট। ‘আর্চি65’ নামে ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি ট্যুইট করা হয়। ইউজার নিজেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে পরিচয় দিয়ে উত্তপ্ত কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে ওইদিন সেনা থেকে ইস্তফা দেন। ট্যুইটে লেখা ছিল, গত রাতে পাকিস্তানের হাতে ২৫ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু কোনও সংবাদমাধ্যমে তার কোনও উল্লেখ নেই।
কিন্তু এই অ্যাকাউন্টটির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা? যে বিস্ফোরক দাবি এই অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে, তার কতটা সত্যি? নিউজ পোর্টাল thequint এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্ফোরক ট্যুইটের সত্যাসত্য। ট্যুইটবিভার অ্যানালিসিসের মাধ্যমে দেখা যায় যে ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভারতীয় সেনার নাম করে ট্যুইটটি করা হয়েছে, সেই হ্যান্ডেলটি ১৬ ই অগাস্টই তৈরি করা হয়েছে। এরপর একই ইউজার নেম দেওয়া একটি অ্যাকাউন্টও চেক করা হয়। যে অ্যাকাউন্টটি সত্যি বলে দাবি করেছিলেন নেটিজেনদের একটি অংশ। দেখা যায় সেই হ্যান্ডেলটি জয়পুরে তৈরি করা হয়েছিল ৬ ই মার্চ, ২০১৯।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কর্নেল বিজয় আচার্য জানান, ১৬ ই অগাস্ট তাঁর অ্যাকাউন্টটি ক্লোন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর ইস্তফার বিষয়টিও ধোপে টেকে না, কারণ গত মার্চেই তিনি সেনা থেকে অবসর নিয়েছেন। অর্থাৎ কাশ্মীর পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে তাঁর অবসর নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আচার্য রাজস্থানের জয়পুরে থাকছেনও না।
একইভাবে এই ভুয়ো হ্যান্ডেলের ফাঁদে পড়ছেন পাক আর্মির আধিকারিকরাও। একইভাবে তাঁরাও নাকি সেনা থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। লেফটেন্যান্ট আসিমুদ্দিন জামালের নাম করে তেমনই একটি ট্যুইট বিভ্রান্তি তৈরি করে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং বালুচিস্তানে ইমরান সরকারের জুলুমের প্রতিবাদ করে পাক রেঞ্জার্স থেকে ১০০ জনকে সঙ্গে নিয়ে আসিমুদ্দিন নামে আধিকারিক ইস্তফা দিয়েছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে।
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আচার্যর মতোই এক্ষেত্রেও ইস্তফার কথা বলা হয়েছে। তবে আসিমুদ্দিনের অ্যাকাউন্টটি যে ফেক, তা বুঝতে কেবলমাত্র কমেন্ট বক্সে গেলেই চলবে।
ফেক ট্যুইটার হ্যান্ডেলে লেফটেন্যান্ট অসিমুদ্দিন বলে দাবি করে যে ছবিটি দেওয়া, তা আসলে জেনারেল আসিম বাজওয়ার। তিনি পাক আর্মির মিডিয়া উইং আইএসপিআরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল।
শুধু কর্নেল আচার্যই নন, ভারতীয় সেনার আরও একাধিক আধিকারিক কিংবা অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গেও এমনই হয়েছে বলে অভিযোগ। অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার মেজর গৌরব আর্য ১৯ শে অগাস্ট সোমবার দাবি করেন, তাঁর নামে একটি ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে। সেই ট্যুইটার হ্যান্ডেলের ইউজার নেম ‘মেজরগৌরবআর্য1’।
ট্যুইটার অবশ্য অবসরপ্রাপ্ত মেজরের অভিযোগের ভিত্তিতে ফেক হ্যান্ডেলটিকে সরিয়ে দিয়েছে।
Comments are closed.