কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পঞ্চায়েতে সর্বনাশ হয়েছে, কার্যকারিতার মেয়াদ ফুরিয়েছে সিপিএম নেতদেরঃ ফব বিধায়ক ভিক্টর
পঞ্চায়েত ভোটে গোটা রাজ্যে প্রায় ৮৫০ জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসন পেয়েছে বামপন্থীরা। তাও তা জিতেছে সিপিএম নয়, ফরওয়ার্ড ব্লক। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায়। বড় শরিক সিপিএমের এই চরম বিপর্যয়ে কোন ম্যাজিকে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ইমরান আলি রমজ ওরফে ভিক্টর নিজের বিধানসভায় একটি জেলা পরিষদ আসন জিতলেন, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বাম শিবিরের অন্দরে। গোটা রাজ্যে সিপিএমের ব্যর্থতা এবং রাজ্যের মধ্যে একমাত্র তাঁর নিজের বিধানসভায় একমাত্র জেলা পরিষদ আসন জেতা নিয়ে thebengalstory.com এ বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তরুণ বিধায়ক ভিক্টর। পঞ্চায়েত ভোটে বামপন্থীদের এই চূড়ান্ত ব্যর্থতার জন্য সরাসরি দায়ী করলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার করার রাজনীতিকে।
প্রশ্নঃ গোটা রাজ্যে সিপিএমের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। জেলা পরিষদে বামপন্থীদের একমাত্র আসন আপনার বিধানসভায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের। এর কারণ কী?
ভিক্টরঃ এর প্রধান কারণ, কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কংগ্রেস প্রীতি। আমি ভোটের আগেই সিপিএম এবং আমার দলের নেতাদের বলে দিয়েছিলাম, রাজ্যে আপনারা যা খুশি করুন, চাকুলিয়ায় আমি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে দেব না। ভোটের আগে উত্তর দিনাজপুরের সিপিএম নেতারা আমাকে বারবার চাপ দিয়েছেন, পুরো জেলায় ২৬ টা জেলা পরিষদ আসনেই জোট করার জন্য। কিন্তু আমি চাকুলিয়ার ৩ টে আসনে জোট করতে দিইনি। শেষ পর্যন্ত সিপিএম ২৩ টা আসনে জোট করে। চাকুলিয়ার ৩ টে আসনেই চারমুখী লড়াই হয়। ১ টায় আমরা প্রার্থী দিই, বাকি ২ টোয় সিপিএম লড়াই করে।
১০ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক ১৬ হাজারের কিছু বেশি ভোট পায়। তৃণমূল কংগ্রেস ১৪ হাজার, বিজেপি ৪ হাজার এবং কংগ্রেস ৬ হাজার ভোট পায়। যদি কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের জোট হোত, তবে ওদের ৮০ শতাংশ ভোটই তৃণমূলে চলে যেত। আমরা হেরে যেতাম। আমি জানতাম, কংগ্রেস লড়াই করলে ওদের ট্র্যাডিশনাল ভোট ওদের বাক্সেই যাবে। তাই চেয়েছিলাম, কংগ্রেস প্রার্থী দিক। আর সেটাই হয়েছে। চাকুলিয়ার বাকি ২ টো জেলা পরিষদ আসনেও সিপিএম মাত্র ২০০ আর ৬০০ ভোটে হেরেছে। জেলায় বাকি আসনগুলোতে সিপিএম এবং কংগ্রেস জোট হয়েছিল, সব জায়গায় আমাদের ভরাডুবি হয়েছে। চাকুলিয়ায় ১৭৪ টা গ্রাম পঞ্চায়েত সিটে জোট না করে বামেরা ৬২ টা আসন জিতেছে। যেখানে জোট হয়েছে তার থেকে শতাংশের হিসেবে অনেক ভাল ফল।
মহম্মদ শাহিদ সিদ্দিকি, জেলা পরিষদে জয়ী একমাত্র বাম সদস্য
প্রশ্নঃ তো চাকুলিয়াতে ৩ টে আসনেই জোট না করে লড়লেন, তাও সিপিএম ২ টোই হারল, ফরওয়ার্ড ব্লক জিতল। এটা কি সিপিএমের প্রতি মানুষের অনাস্থা?
ভিক্টরঃ সিপিএমের প্রতি মানুষের অনাস্থা নয়। অনাস্থা নেতাদের ওপর। সব জিনিসের মতো নেতাদেরও কার্যকারিতার একটা মেয়াদ থাকে। আমাদের, সিপিএমের অনেক নেতারই কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আজকের প্রজন্ম তাই তাঁদের গ্রহণ করছে না। নতুন প্রজন্মের নেতাদের তুলে আনতে হবে। এখনকার প্রজন্মকে শুধু ৭২-৭৭ শুনিয়ে কোনও লাভ নেই। এখন সিপিএমের বেশিরভাগ নেতারই মানুষের কাছে কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই সিপিএম এখন অন্য বামপন্থী দলগুলোর কাছে বোঝা হয়ে গেছে। চাকুলিয়াতেই আমি ফরওয়ার্ড ব্লকের জন্য আরও একটা সিট চেয়েছিলাম, সেখানে লড়লেও জিততাম। মানুষ সিপিএমকে ভোট দিতে চাইছে না।
প্রশ্নঃ এই যদি অবস্থা হয়, তবে লোকসভা ভোটে কী হবে?
ভিক্টরঃ সিপিএম যেভাবে চলছে সেভাবে চললে কিছুই হবে না। ওপরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করছে আর গোপনে-গোপনে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করছে তৃণমূলকে হারাতে। পঞ্চায়েত ভোটেই অনেক জায়গায় বিজেপিকে সিট ছেড়ে দিয়েছে নিজে না লড়ে। আমি তো বলে দিয়েছি, রায়গঞ্জ লোকসভাতেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট মানব না। সিপিএম জোট করলে আমি আলাদা লড়ব।