রাজ্যে প্রথম করোনা: আক্রান্ত তরুণ দু’দিনে কার কার সংস্পর্ষে এসেছিলেন, খুঁজছে প্রশাসন, বিমানযাত্রীদের তালিকা তৈরি

রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলার পরই প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। মঙ্গলবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ব্রিটেন ফেরত যে তরুণের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে, তিনি রাজ্যেরই এক আমলার ছেলে। কলকাতা বাইপাস লাগোয়া পঞ্চসায়র থানা এলাকার এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা তাঁরা।

 

ওই তরুণ রবিবার ব্রিটেন থেকে ফিরেছেন। সেখানে এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। সোমবার তিনি দক্ষিণ কলকাতার ওই বাড়িতেই ছিলেন। কিছুদিন আগে পারিবারিক সূত্রে নবান্নে এক শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে দেখাও করতে যান বলে খবর।

 

ওই তরুণকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করার পর রবিবার যে বিমানে তিনি দেশে ফিরেছেন তার সমস্ত যাত্রী, কাদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন তার খোঁজ চালাচ্ছে প্রশাসন।

 

সূত্রের খবর, সোমবার ওই তরুণকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন  শরীরে করোনার উপসর্গ মেলেনি। রাতে তাঁর কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণকে আইডিতে নিয়ে আসা হয়। আর এদিনই রাতে রিপোর্ট পজিটিভ মেলে।

 

এরপরই তরুণের মা এবং গাড়ির চালককে রাজারহাটের আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় কার কার সঙ্গে এ ক’দিন তিনি দেখা করেছেন তাদের খোঁজ।

 

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার জানিয়েছেন, আবাসন, নবান্ন, বাঙুর হাসপাতাল, বিমানের সহযাত্রী সহ সর্বত্র কোন কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে তিনি এসেছেন, তাঁদের খোঁজ শুরু হয়েছে।

 

কন্ট্র্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে এঁদের প্রত্যেককে হাসপাতাল, অথবা গৃহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। রাতেই ওই তরুণের বাবাকে কলকাতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে সরকার। ব্রিটেন থেকে ফেরার পরই কেন ওই তরুণকে সরাসরি আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খোঁজখবর শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন।

 

সূত্রের খবর, রাজ্যজুড়ে করোনা সন্দেহে নজরদারিতে রয়েছেন ১২ হাজারের বেশি মানুষ। ৭০ জনের নমুনা কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য এনআইবি পুনে এবং নাইসেডে পাঠানো হয়েছিল। ব্রিটেন ফেরত ওই তরুণ ছাড়া বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

 

এরই মধ্যে মঙ্গলবার মুম্বইতে করোনা আক্রান্ত আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। ঘাটকোপারের ওই বাসিন্দা মার্চ মাসের শুরুতেই দুবাই থেকে ফিরেছিলেন। ওই মৃত্যুর ঘটনায় ভারতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিন হয়েছে।  এই মুহূর্তে ভারতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৪০ এর কাছাকাছি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব বলেছেন, ভারত এখন স্টেজ টু তে দাঁ‌ড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আশঙ্কার কারণ, এরপরেই হল স্টেজ থ্রি। যাকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা হচ্ছে। তখন সামাজিক সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল হবে।

 

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এখনও না হলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, যতটা সম্ভব বাস, ট্রেন, মেট্রো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। একান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরে বেরনো উচিত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বিবৃতি দিয়ে বলেছে, প্রত্যেক সন্দেহভাজনেরই করোনা পরীক্ষা করতে হবে। সব মিলিয়ে প্যান্ডেমিক করোনা আতঙ্কে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি ভারত তথা বিশ্বের প্রায় ১৪৬ টি দেশ।

এদিকে কলকাতায় করোনার সন্ধান মিলতেই মঙ্গলবার রাত থেকে গোটা রাজ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বুধবার সকালে শহরের রাস্তাঘাট গত দু’দিনের তুলনায় আরও ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার স্কুল, কলেজে ছুটি ঘোষণা করলেও সরকারি অফিস ছুটি দেয়নি। অনেক বেসরকারি অফিসও খোলা। এই কর্মীদের বাসে, ট্রেনে, মেট্রোতে অফিসে আসতে হচ্ছে। এই সব পরিবহণ কিছুটা ফাঁকা হলেও ভিড় যে একেবারে নেই, তা নয়। বুধবার ট্রেনে, বাসে, মেট্রোতে বহু যাত্রীকে মুখে মাস্ক পরে থাকতে দেখা গেল। যাঁরা অফিস করছেন, তাঁদের মধ্যে চরম আতঙ্ক। সকলেই বলছেন, সরকারের এখন দু’সপ্তাহ সমস্ত অফিস ছুটি ঘোষণা করা উচিত। কলকাতায় যখন করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, তখন আর কোনও ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। এই রকম পরিস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রবীণরা বলছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় পরিবেশ কিছুটা এমন ছিল। আতঙ্ক এখন গোটা রাজ্যকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

Comments are closed.