করোনা মোকাবিলায় Immunity: অনাক্রমতা বাড়তে পারে কোন খাবার খেলে?

পৃথিবীজুড়ে এখন একটাই আতঙ্ক মানুষকে গ্রাস করেছে। তা হল করোনাভাইরাস। কোনও প্রতিষেধক তৈরি না হওয়ায় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা, লকডাউন ও সেল্ফ আইসোলেশনে থাকার মতো সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immunity) বাড়ানোর কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা অন্যান্য বড় অসুখে ভুগছেন, যেমন, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা ইত্যাদি, এই রোগীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই ইমিউনিটি বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

 

ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কী? What is Immunity?

ইমিউনিটি হল মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

এই প্রক্রিয়া সাধারণত দেহের জন্য উপকারী। কিন্তু কোনও কোনও সময় অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল হলে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকারকও বটে। কারণ ইমিউনিটি ব্যবস্থা তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর উপাদান ধ্বংস করতে গিয়ে দেহের জন্য দরকারী এবং উপকারী উপাদানগুলিকে ধ্বংস করে জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার নাম হচ্ছে অতিসংবেদনশীলতা বা হাইপারসেন্সিটিভিটি।

ইমিউনিটি দুই প্রকার- এক, Innate Immunity বা ইনবর্ন প্রতিরোধ  যা জন্মগতভাবে প্রাপ্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দুই, Acquired Immunity বা অর্জিত প্রতিরোধ।

Innate Immunity হল একরকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যা মাতৃগর্ভে থাকার সময় জন্ম নেয়। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও জীবাণুর সঙ্গে পরিচয় ঘটার আগে থেকেই মানুষের শরীরে কাজ করতে থাকে।

Acquired বা অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে একরকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যা জন্মের পর কোনও জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর সৃষ্টি হয় এবং একই জীবাণু দ্বারা বারবার সংক্রমিত হওয়ার ফলে অধিকতর শক্তিশালী হয়। এই ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট এক বা একাধিক পরিচিত জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

এই দু’প্রকারের ইমিউনিটি আবার ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক এবং আর্টিফিসিয়াল বা কৃত্রিম এই দুই ভাগে বিভক্ত।

 

Active Immunity বা প্রত্যক্ষ অনাক্রম্যতা

how to improve immunity

 

এ ক্ষেত্রে দেহের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম শ্বেতকণিকারা জীবাণুকে ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত থাকে। এদের আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়।

 

Natural Active Immunity বা প্রাকৃতিক প্রত্যক্ষ অনাক্রম্যতা

দেহে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে যে প্রতিরোধ ক্ষমতার সৃষ্টি হয় তার নাম প্রাকৃতিক প্রত্যক্ষ অনাক্রম্যতা। যেমন- জল বসন্ত বা গুটি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর যে প্রতিরোধ ক্ষমতার সৃষ্টি হয় তা এই শ্রেণিভুক্ত।

 

Artificial Active Immunity বা কৃত্রিম প্রত্যক্ষ অনাক্রম্যতা

টিকার (vaccination) মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে রোগের সংক্রমণ ঘটিয়ে যে প্রতিরোধ ক্ষমতার সৃষ্টি করা হয় তার নাম কৃত্রিম প্রত্যক্ষ অনাক্রম্যতা। যেমন- টিকার দ্বারা গুটি বসন্তের বিরুদ্ধে যে কৃত্রিম প্রতিরোধ ক্ষমতার সৃষ্টি করা হয় তা এই শ্রেণিভুক্ত।

একইভাবে ডিপিটি টিকার দ্বারা ডিপথিরিয়া, পার্টুসিস বা হুপিংকাশি এবং টিটেনাস ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করার জন্য যে টিকা দেওয়া হয় তাকে কৃত্রিম বা আর্টিফিসিয়াল অ্যাকটিভ ইমিউনিটি বলে।

 

Passive Immunity বা পরোক্ষ অনাক্রমতা

শরীরের বাইরে কোনও মাধ্যমে শ্বেতকণিকা দ্বারা তৈরি অ্যান্টিবডিকে কোন ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করিয়ে একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়।

 

ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (How Immunity Works)

যে কোনও রোগে কাহিল হওয়ার আগে আপনার শরীরের মধ্যে থাকা ইমিউনিটি সিস্টেম সেই রোগের সঙ্গে লড়াই চালায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লড়াইয়ে জয়ী হয় ইমিউনিটি। হাম, জল বসন্ত, গুটি বসন্ত, ইত্যাদির উদাহরণ দেওয়া যায়।

তাছাড়া ডিপথিরিয়া, হুপিং কাশি ইত্যাদি রোগের টিকার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্ম দেওয়া হয়।

 

ইমিউনিটি বাড়াতে কী খাবেন? (Foods to Improve Immunity)

মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের উপর। যার মধ্যে দুগ্ধজাত খাবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১২ ইত্যাদি রয়েছে।

 

দুগ্ধজাত খাবার

দুগ্ধজাত খাবারকে বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়োটিক ফুড বলা হয়। এরা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরিতে বিশেষ কার্যকরী। দুধ, দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

 

প্রোটিন

শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়। শরীর সুস্থ রাখতে তাই প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। নিয়মিত ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল খান। এসব থেকে থেকে পেতে পারেন প্রোটিন। তবে রেড মিট এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

 

কতটা খাবেন?

মোটামুটিভাবে পেট ভরার মতো খাবার খাওয়া দরকার। সাধারণত, কারও ওজন ৬৮ কেজি হলে, তাঁর দিনে ৬৮ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন নেওয়া প্রয়োজন।

 

ভিটামিন সি

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দুর্দান্ত। ভিটামিন সি মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। যা ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হার্টের রোগ, ক্যানসার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায়। এই ভিটামিন সি পাওয়ার জন্য লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে খাওয়া দরকার।  যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন সি জমা করে রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন এইসব খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এছাড়া দিনে অন্তত আড়াই লিটার জল পান করা, খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে। প্রতিদিনের খাবারে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ অ্যান্ট্রি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখলে তবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যাবে।

তাছাড়া করোনা হানা থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন, মোটামুটি ভাবে সকলেই নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দৌলতে সুস্থ হয়েছেন। তাই অসুস্থ হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি। করোনা মোকাবেলায় Social Distancing -মেনে চলুন আর তার সাথেই  নজর দিন নিজের স্বাস্থ্যে।

Comments are closed.