করোনা কালে প্রান্তিক পড়ুয়াদের পাশে ফুডম্যান চন্দ্রশেখর কুন্ডু, সুন্দরবন সহ পিছিয়ে পড়া এলাকায় বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ
করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ স্কুল-কলেজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ই-ক্লাস করাচ্ছে বটে, কিন্তু যাদের কাছে স্মার্টফোন থাকা দূর অস্ত, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই সেই পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কী হবে? বিশেষতঃ আমপান বিধ্বস্ত সুন্দরবনের মতো এলাকায়? এই ভাবনা থেকেই সুন্দরবন অঞ্চলের কচিকাঁচার পাশে দাঁড়িয়েছেন আসানসোলের ‘ফুডম্যান’ চন্দ্রশেখর কুন্ডু। সদ্য রাজনীতিতে আসা চন্দ্রশেখরবাবু চার বছর ধরে ছ’টি কোচিং সেন্টার চালাচ্ছিলেন বিনামূল্যে। নাম দিয়েছিলেন ‘বইটই হইচই’। সেটাই এখন ১৬ টিতে নিয়ে এসেছেন। ৪০০ পড়ুয়া নিয়ে শুরু করা কোচিং ক্লাসে এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এক হাজার পার করেছে।
গত এক মাসে বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থার আবেদন ও উৎসাহে আসানসোল, সুন্দরবন, কুলতলি, মৌসুনী দ্বীপ, পুরুলিয়াতে তিনি খুলেছেন আরো দশটি ‘বইটই হইচই’ কোচিং সেন্টার। মোট ষোলোটি কোচিং ক্লাসে উপকৃত হচ্ছে প্রায় হাজার খানেক পড়ুয়া। ডিজিট্যাল শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও শিক্ষার সুযোগ হাতছাড়া হয়নি তাদের। সৌজন্যে আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু। সাতাশ জন শিক্ষক বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের ছোটদের শিক্ষার ভার নিয়েছেন।
আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকা চন্দ্রশেখরবাবু প্রায় দু’মাস পড়ে ছিলেন আমপান পরবর্তী সুন্দরবনে। সেখানে গরিব, অসহায় মানুষদের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার, তৈরি করে দিয়েছেন ঘর। নোনা জল ঢুকে যাওয়া পুকুর সংস্কারের কাজে সহায়তা করেছেন। চন্দ্রশেখরবাবুর কথায়, শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি কমানোই তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কী হবে? এই ভাবনা থেকেই কোচিং ক্লাসের কলেবর বাড়িয়েছেন আসানসোলের সমাজকর্মী।
চন্দ্রশেখরবাবুর কথায়, করোনা আবহে অর্থনৈতিকভাবে অথবা শিক্ষার হারে পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলোতে স্কুলছুট আরও বেড়ে যাচ্ছিল। গ্রামের সরকারি স্কুলগুলোতে একসাথে সব অর্থনৈতিক অবস্থার বাচ্চারা পড়াশোনা করে। কিন্তু বাচ্চারা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর দিনমজুর অথবা নিরক্ষর বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারতেন না। প্রাইভেট টিউটর রাখার ক্ষমতাও নেই। তাই পড়াশোনাতে বাচ্চারা বাকিদের থেকে পিছিয়ে পড়ত। এক সময় উৎসাহ হারিয়ে তারা স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিত। মূলত স্কুলছুট বন্ধ করতে শুরু হওয়া এই ‘বইটই হইচই’ করোনার সময়ে প্রান্তিক অঞ্চলের পড়ুয়াদের কাছে পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফুডম্যান চন্দ্রশেখরের কথায়, “গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে এইরকম কোচিং ক্লাস কিন্তু চালানো যেতেই পারে। পড়ানোর জন্য নিযুক্ত হতে পারেন পাড়ারই কোনও শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতী।”
আসানসোলের শিক্ষিকা শান্তি হাসদা ও মৌসুনী দ্বীপের শিক্ষক সাফিউল্লাহের কথায়, এই ‘বইটই হইচই’ স্কুল চালিয়ে আমাদের মতো বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তার সঙ্গে পাড়ার বাচ্চাদের উপকারে আসতে পারছি এটাও অনেক বড়ো পাওনা। কিন্তু এতগুলো কোচিং সেন্টার, শিক্ষকদের পারিশ্রমিক ও অন্যান্য খরচ যোগানো তো বেশ কঠিন কাজ। কী করে সম্ভব হচ্ছে?
চন্দ্রশেখরবাবুর বন্ধু তথা ফুড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি প্রকল্পের কো অর্ডিনেটর ডক্টর অপূর্ব চ্যাটার্জি জানাচ্ছেন, একটি সর্বভারতীয় ক্রাউড ফান্ডিং সংস্থা আমাদের প্রকল্পের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আশা করছি, আরও বেশ কিছু কোচিং ক্লাস খুলতে পারবো।
Comments are closed.