দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার সেকেন্ডে ওয়েভ। প্রতি সেকেন্ডে সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুধুমাত্র কলকাতাতেই দৈনিক সংক্রমণ ১৬ হাজারের বেশি। দেশের রাজধানীতে মৃতদেহ সৎকারের জায়গার অভাবে পার্ককে বানানো হয়েছে অস্থায়ী শ্মশান। কিন্তু চারদিকে সবই কি কেবল খারাপ?
এহেন দমবন্ধ পরিস্থিতিতেও খোলা হওয়ার মতো কিছু ঘটনা উঠে এসেছে। হাজারো খারাপের মাঝে, একটুখানি ভালোলাগার গানের মতো। তেমনই বাগবাজারের মা, মেয়ে শ্রাবস্তী আর অজন্তা।
শহরে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন বহু মানুষ। সেখানে মূল সমস্যা খাওয়া দাওয়ার। অসুস্থ শরীরে কী করে রাঁধবেন? করোনা শুনলে হোম ডেলিভারি আসা নিয়ে সংশয়! চিন্তা নেই, এই অবস্থায় পড়লে মা, মেয়ে আছেন আপনার পাশে।
করোনা সংক্রমিতদের বাড়িতে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন শ্রাবস্তী ঘোষ এবং তাঁর মা অজন্তা ঘোষ। বুধবার বাগবাজারের বাড়ি থেকেই তাঁরা শুরু করেছেন খাবারের ফ্রি হোম ডেলিভারি। আপাতত ১৫ জনকে নিয়মিত খাওয়ার পৌঁছে দেবেন। খাবারের জন্য আগের দিন রাতে ফোনে যোগাযোগ করতে হবে। নিজের নাম্বার দিয়ে এই মর্মে ফেসবুকে একটি পোস্টও করেছেন তিনি।
নৃত্য শিল্পী, বর্তমানে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শ্রাবস্তী। জানালেন, এখন বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করতে হচ্ছে। আর এই কাজের ফাঁকে সময় বের করে অক্সিজেন, হাসপাতালের বেড সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সাহায্য করছিলেন। সেই কাজ করতে করতেই সিদ্ধান্ত নেন হোম আইসোলেশন থাকা কোভিড পেশেন্টদের বাড়িতে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেবেন।
রোজ ১৫ জনের জন্য রান্না তো বেশ ঝক্কির ব্যাপার। সামলাচ্ছেন কী ভাবে?
হেঁসে উত্তর দিলেন, মা রান্না করছেন, আমি বাজার করছি। দুই বন্ধু আছে তাঁরা বাইকে করে খাওয়ার পৌঁছে দিচ্ছেন।
শ্রাবস্তীর মা অজন্তা ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ নৃত্য অ্যাকাডেমির কর্মী। কোভিডের জন্য তাঁরও ওয়ার্ক ফ্রম হোম। অফিসের কাজের ফাঁকে একা হাতে সামলাচ্ছেন এই বিরাট আয়োজন।
প্রথম কীভাবে এরকম একটা চিন্তা মাথায় এল? খুব স্বাভাবিক গলায় বললেন, দেখুন এটা তো তেমন কোনও বড় ব্যাপার নয়। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবারই একে অপরের পাশে থাকতে হবে। শ্রাবস্তী আরও বললেন, এরকম অনেক পরিবার আছে, সবাই পজেটিভ। তাঁদের কথা ভেবেই মূলত এই কাজ।
প্রথমে মাকে এসে বলেছিলেন নিজের ইচ্ছের কথা। মেয়ের কথায় মা অজন্তাও এক কথায় রাজি। শুরু কাজ। রোজই মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, তরকারির সঙ্গে মাছ, মাংস অথবা ডিম।
শ্রাবস্তী বলেন, নাম্বারটা শেয়ার করার পর প্রচুর ফোন আসছে। উত্তর কলকাতায় এরকম খাবার হোম ডেলিভারি আমরাই প্রথম শুরু করি। তাই মানুষের চাহিদা বেশি। সবার অনুরোধ রাখতে পারছি না, বলে খারাপ লাগছে।
Comments are closed.