কেরলের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম। আর্থিক অনটনের কারণে ক্লাস টেনের পর পড়াশোনাও ছাড়তে হয়েছিল। এমনকী, দিন গুজরান করতে কখনও বিড়ি বাঁধার কাজ করেছেন, আবার কখনও দিনমুজরি। সেই তিনি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস জেলা আদালতের ২৪০তম বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুরেন্দ্রন পট্টেলের জীবন সংগ্রাম যেন আক্ষরিক অর্থেই একটি রূপকথা।
৫১ বছর বয়সি সুরেন্দ্রনের জন্ম কেরলের কাসারগড়ে। বাবা দিনমজুরি করতেন। টাকার অভাবে ক্লাস টেনের পর পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সুরেন্দ্রন। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কখনও বিড়ি শ্রমিকের কাজ করেছেন আবার কখনও দিনমুজরি। এভাবেই হয়তো জীবনটা কেটে যেত। কিন্তু সুরেন্দ্রন যেন অন্যরকম পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কিছুটা টাকা পয়সা জমলেই ফের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ‘এ কে নারায়ণ মেমোরিয়াল গর্ভমেন্ট কলেজে’ ভর্তি হন। পাশপাশি খরচ চালানোর জন্যও কাজ করতেন। কাজের কারণে হামেশাই কলেজে অনুপস্থিত থাকতেন। যার জেরে তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছিল না। যদিও তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষায় বসার জন্য অনুরোধ করেন সেই সঙ্গে বলেন, তিনি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট না করলে কলেজ ছেড়ে দেবেন। ফল বেরোনোর সময় দেখা যায় দিনমুজরি করেও সুরেন্দ্রন পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন।
এরপর এলএলবি’র জন্য ল-কলেজে ভর্তি হন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ল-কলেজ ভর্তি হওয়ার জন্যও তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। এরপর এক বন্ধুর সাহায্যে এবং একটি হোটেলে কাজ নেন। ১৯৯৫ সালে এলএলবি পাশ করেন।
এলএলবি পাশের পর সুরেন্দ্রনকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৬ সালে কেরলেই প্র্যাকটিস শুরু করেন। আইনজীবি হিসাবে খুব শীঘ্রই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালে আমেরিকায় পাড়ি দেন। টেক্সাসাসেও একটি আইনির পরীক্ষা পাশের পর ইউনিভার্সিটি অব হাউসটন ল-সেন্টার থেকে এলএলএম পাশ করেন। ২০১১ সাল থেকে টেক্সাসেই আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন এবং নিজের একটি ল-ফার্ম শুরু করেন। সম্প্রতি টেক্সাসের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের ২৪০তম বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুরেন্দ্রন কে পট্টেল।
Comments are closed.