জইশ বা লস্করের কোনও জঙ্গি নয়, মাথার দামের নিরিখে এনআইএ-র ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় এখনও এক নম্বরে মাওবাদী গণপতি

শারীরিক কারণে তিনি সরে গিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে। প্রায় ছ’মাস হতে চলল, তাঁর জায়গা নিয়েছেন অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসব রাজু। ২০১৪ সালে বদলে গিয়েছে কেন্দ্রের সরকারও। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাওবাদীদের সবচেয়ে বড় বিপদ বলে চিহ্নিত করা মনমোহন সিংহের চেয়ারে বসে ৫ বছর পূর্ণ করার পথে নরেন্দ্র মোদী। অধিকাংশ ইস্যুতেই কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব বা অগ্রাধিকারের বদল হলেও, পালটায়নি সিপিআই মাওবাদীর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মুপ্পালা লক্ষ্ণণ রাও ওরফে গণপতি সম্পর্কে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার মনোভাব। মাথার দামের নিরিখে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-র ওয়েবসাইটের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় এখনও জ্বলজ্বল করছে গণপতির ছবি। মাথার দাম সর্বোচ্চ, ১৫ লক্ষ টাকা।

গণপতি, মাওবাদীদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক

ইউপিএ আমলে মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় এরাজ্যের লালগড় সহ দেশের বিস্তীর্ণ অংশে ব্যাপক আকার নেয় মাওবাদী রাজনীতি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছোয়, মধ্য ভারতের ‘রেড করিডোর’ নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে কার্যত অগম্য এলাকা বলে চিহ্নিত হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাওবাদীদের সবচেয়ে বড় বিপদ বলে চিহ্নিত করেন তিনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের উদ্যোগে শুরু হয় অপারেশন গ্রিন হান্ট। যদিও সিপিআই মাওবাদীর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির কোনও হদিশ পায়নি পুলিশ।
আর তাই মাওবাদীদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বাসব রাজু কিংবা পাক মদতপুষ্ট জইশ, লস্করের কোনও জঙ্গি নেতা নয়, আজও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আইনি ভাষায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ গণপতিই। এনআইএ-র ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় মাসুদ আজহার, হাফিস সৈয়দের পাশাপাশি ছবি এবং নাম রয়েছে গণপতির। বাকিদের টপকে তাঁর মাথার দামই সর্বোচ্চ। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাও হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে মাওবাদীদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদককে। বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর মাথার দামও আলাদা করে ধার্য করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সত্তরোর্ধ্ব গণপতির মাথার দাম সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা। যা সমস্ত মাপকাঠিতেই দেশে সর্বোচ্চ।
সূত্রের খবর, পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নিলেও সংগঠনের কাজে এখনও অত্যন্ত সক্রিয় তেলঙ্গানার করিমগরের আদি বাসিন্দা মুপ্পালা লক্ষ্ণণ রাও ওরফে গণপতি। সংগঠনের পাশাপাশি দলের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবেও গণপতি কাজ করে যাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। ২০০৪ সালে সিপিআই মাওবাদী পার্টির জন্মলগ্ন থেকেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন গণপতি। তার আগে পিপলস ওয়ার গ্রুপের শীর্ষ স্তরের নেতা হিসেবে কাজ করেন তিনি। পিডব্লুজি-র সঙ্গে এমসিসি-র মিলনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন বিজ্ঞানে স্নাতক গণপতি।

Comments are closed.