ভোটের মুখে পাঞ্জাবে নতুন উপদ্রব! যার জেরে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতিক, সকলেই বেশ চিন্তিত।
ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের গলা নকল করে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে একদল প্রতারক শাসক দলের বিধায়কদের কাছ থেকে টাকা তুলছে। ইতিমধ্যেই কোটি টাকা প্রতারণার শিকার পাঞ্জাবের টিকিট প্রত্যাশীরা। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য সবুজ বিপ্লবের দেশে। পাঞ্জাব পুলিশ জানাচ্ছে, বাংলার ভোটেও একইভাবে প্রতারণা চালিয়েছে নকল পিকের গ্যাং!
এরকমই একটি প্রতারক দল লুধিয়ানা, জলন্ধর, অমৃত্সর প্রভৃতি জায়গার ৩০ থেকে ৪০ জন কংগ্রেস বিধায়কের সঙ্গে প্রতারণা করে ফেলেছে। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দলটি পিকের পরিচয় ভাঙিয়ে কংগ্রেস নেতাদের কাছ থেকে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫ কোটি টাকা আদায় করেছে।
কংগ্রেস বিধায়ক কুলদীপ সিংহের সঙ্গে প্রতারণা করার সময় প্রতারক দলটি পুলিশের জালে ধরা পড়ে। এক পুলিশকর্তা জানান, কুলদীপ সিংহের নির্বাচনী কেন্দ্রে এসে একদল নিজেদের প্রশান্ত কিশোরের লোক বলে পরিচয় দিয়ে সার্ভে করে। তারপর একদিন তাঁর কাছে ফোন আসে পিকের। আগে পিকের সঙ্গে বৈঠক করার সূত্রে কুলদীপের পরিচিত তাঁর কণ্ঠস্বর। কুলদীপ সিংহের দাবি, গলা শুনে তিনি প্রথম দিকে কিছুই বুঝতে পারেননি। কিন্তু ১০ লক্ষ টাকা চাইতেই সন্দেহ হয় বিধায়কের। টাকা দেবেন সম্মতি দিয়ে ফোন রাখেন তিনি। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পিকে ওই বিধায়কের নামে ভালো সমীক্ষা রিপোর্ট উপর মহলে পৌঁছে দেবেন। তাতে টিকিট পাকা হবে।
বিধায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশে জাল পাতে এবং ১১ মে ও ১৩ মে দুই প্রতারকে গ্রেফতার করে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ধৃতরা হলেন রাকেশ কুমার ভাসিন এবং রজতকুমার রাজা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের মাথা গৌরভ শর্মাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃতরা সকলেই অমৃতসরের বাসিন্দা।
গৌরভ শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ হাতে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য আসে। গৌরভ একজন পেশাদার জুয়ারি। রোজই লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলেন। টিভিতে বহুবার প্রশান্ত কিশোরের ইন্টারভিউ শুনে শুনে হুবুহু পিকের গলা, কথা বলার ধরণ নকল করতে পারতেন।
চাঞ্চল্যকর বিষয় হল গৌরভের প্রতারণার জাল শুধুমাত্র পাঞ্জাবেই ছড়িয়ে ছিল না। পিকের ছদ্মবেশ নিয়ে বিহার, রাজস্থান, হরিয়ানা এমনকী পশ্চিবঙ্গেরও একাধিক নেতার কাছ থেকে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছে সে বলে দাবি পাঞ্জাব পুলিশের। স্বাভাবিকভাবেই প্রতারিত নেতারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি, পুলিশেও অভিযোগ হয়নি।
কুলদীপ সিংহ জানান, আমার প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে এর আগে চন্ডীগড়ে বিধায়কদের ডাকা একটি বৈঠক আলাপ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ফোনে যখন ওই ছদ্মবেশীর সঙ্গে কথা বলি আমারও কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল পিকের সঙ্গেই কথা বলছি। পরে লোকটি আমরা কাছে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকা চায়। তখনই আমার সন্দেহ হয়।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপটেন অমরিন্দর সিংহ ভোট কুশলী হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে চুক্তি করেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রশান্ত কিশোরকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেন ক্যাপ্টেন।
Comments are closed.