অসম এনআরসি: ডিটেনশন ক্যাম্পের শ্রমিকদের নাম বাদ, নিজের হাতে তৈরি ক্যাম্পেই কি ঠাঁই হবে তাঁদেরও? আতঙ্কে শেফালি-মালতিরা
অসমের গোয়ালপাড়ায় তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প। গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ার মাটিয়ায় গত বছর থেকেই জঙ্গল সাফ করে অতিকায় ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই কাজ এগিয়েও গিয়েছে অনেকটা। কিন্তু এখানেই তৈরি হয়েছে এক প্রবল বিভ্রান্তির বাতাবরণ। সোমবার আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই বিভ্রান্তির কথা।
প্রতিবেদন সূত্রে খবর, গোয়ালপাড়া ডিটেনশন সেন্টারে কাজ করছেন যে শ্রমিকরা, তাদের বেশিরভাগেরই নাম নেই এনআরসিতে। ফলে নিজের হাতে, নিজের শ্রম দিয়ে যে সমস্ত মানুষ তৈরি করছেন দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প, শেষপর্যন্ত সেখানেই ঠাঁই হতে পারে নির্মাণ শ্রমিকদের একাংশের।
সবুজে ঢাকা ছোট্ট গোয়ালপাড়া জনপদ। সেখান থেকে কিছুটা দূরেই পতিত জমি সাফ করে তৈরি হচ্ছে বিশাল ডিটেনশন সেন্টার। বহরে যা ৭ টি ফুটবল মাঠের সমান। জমি তৈরি থেকে বিল্ডিং নির্মাণ, মিস্ত্রি থেকে যোগানকর্মী, সবই আসছেন আশেপাশের গ্রাম থেকে। যাঁদের সিংহভাগই আদিবাসী সম্প্রদায়ের।
তেমনই একজন শেফালি হাজং। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই মহিলা ডিটেনশন সেন্টারে যোগানকর্মীর কাজে নিযুক্ত। বাড়ি পাশের গ্রামে। তাঁর নামও নেই এনআরসিতে। যা নিয়ে প্রবল চিন্তায় পড়েছেন তরুণী শেফালি। কিন্তু গ্রামে অপরিসীম দারিদ্র। তাই বাধ্য হয়ে নির্মাণ কাজে নামতে হয়েছে। তিনি জানেন, নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে, তাঁরও ঠাঁই হবে এই ডিটেনশন সেন্টারেই। নিরুপায় শেফালি বলছেন, পেটের দায়ে এই কাজ করতে হচ্ছে। আর কোনও উপায় নেই।
রয়টার্সের সাংবাদিক শেফালিকে তাঁর বয়স জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু শেফালি নিজের বয়স জানেন না। উত্তর দিয়েছিলেন, ২৬ হবে। সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, বার্থ সার্টিফিকেটে কী লেখা আছে? তার উত্তরে শেফালির মা মালতি হাজং জানান, তাঁদের কারও বার্থ সার্টিফিকেট নেই।
প্রকল্পের একটি অংশে ঠিকাদারির বরাত পাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল হক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তিনিও নিরুপায়। বলছেন, কাজ খুঁজতে প্রতিদিন সকালে প্রকল্প এলাকায় ভিড় করছেন আশেপাশের গ্রামের আদিবাসীরা। তাঁদের বেশির ভাগেরই নাম নেই নাগরিকপঞ্জিতে। কীভাবে তাদের নাম উঠবে, তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা।
তাহলে কি যে ডিটেনশন সেন্টার তৈরিতে দৈনিক ঘাম ঝরাচ্ছেন শেফালি, মালতিরা, তাঁদেরও ঠাঁই হবে কাঁটাতার মোড়া ১০ ফুটের উঁচু প্রাচীরের ভিতরের ডিটেনশন সেন্টারে? হতদরিদ্র্ আদিবাসী মানুষগুলো কীভাবে প্রমাণ করবেন নিজেদের নাগরিকত্ব? সেই প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে। কেবল মাথা গুঁজে ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করে যাচ্ছেন শেফালি-মালতিরা। মনে প্রশ্ন, এখানেই তাঁদেরও এসে পড়তে হবে না তো? শেফালিদের কথা ভাববে কে?
Comments are closed.