মোহরের টোপ দিয়ে লোপাট ৬ লক্ষ টাকা! বেনিয়াপুকুরের ঘটনার তদন্তে লালবাজার

কলকাতা শহরের বুকে ৩০০ সোনার মোহর বিক্রির টোপ দিয়ে ৬ লক্ষ টাকা লোপাট করে উধাও হল একদল দুষ্কৃতী। ঘটনাটি ঘটেছে বেনিয়াপুকুরে থানা এলাকার পাঁচ নম্বর গোবরা রোডে। লালবাজারের জালিয়াতি দমন শাখার গোয়েন্দারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত মার্চের মাঝামাঝি। জনৈক রাজু এবং শ্যাম মুর্মু সহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজন বেনিয়াপুকুরের গোবরা রোডের বাসিন্দা কাজি হাফিজুর রহমানকে ফোন করে মোহর বিক্রির টোপ দেয়। পুলিশ সূত্রের খবর, হাফিজুরের সঙ্গে গত মার্চে রাজু ফোনে যোগাযোগ করে। সে জানায়, আগে হাফিজুরের বাড়িতে রঙের কাজ করে গিয়েছে। সেই সুবাদে আগে তাঁকেই ফোন করছে। সে জানায়, বীরভূমে তাদের গ্রামে একজনের জমি খুঁড়ে শ’তিনেক মোহর উঠেছে। তবে পরিচিত বলে হাফিজুরকে সস্তায় মোহর পাইয়ে দিতে চায় রাজু। তা হলে সেও দু’পয়সা কমিশন পায়। তবে করোনা আবহে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় তখন বীরভূমে যেতে পারেননি হাফিজুর।

এদিকে হাফিজুরের বিশ্বাস অর্জন করতে রাজু ফোন করে শ্যাম মুর্মু নামে একজনের কথা বলে। বলা হয় সে এক গরিব আদিবাসী শ্রমিক। বীরভূমের গ্রামে থাকে। বাড়ির ভিত কাটতে গিয়ে মাটি খুঁড়ে এক ঘড়া নবাবি আমলের খাঁটি সোনার মোহর পেয়েছে। শ্যাম গরিব মানুষ, এত মোহর নিয়ে সে কী করবে! তাই সস্তায় তা বেচে দিতে চায় সে।

গোয়েন্দারা বলছেন, ফোনে এসব কথা শুনে টোপ গেলেন হাফিজুর। এরপর পরখ করে দেখার জন্য একদিন রাজু ও শ্যাম একটি মোহর হাফিজুরকে দেয়। পাড়ার স্যাঁকরাকে দেখানো হলে তিনি জানান, মোহরটি সত্যিই সোনার তৈরি। এতে রাজু ও তার দলের প্রতি আস্থা আরও বেড়ে যায় হাফিজুরের। এদিকে রাজুরা জানায়, প্রতি পিস মোহর দু’হাজার টাকায় বিক্রি করে দেবে। কারণ, বেশি দিন রাখলে পুলিশি সমস্যা হতে পারে।

লোভনীয় প্রস্তাব পাছে হাতছাড়া হয়, তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে বাকি ২৯৯ টি মোহর কিনতে বীরভূম রওনা হন হাফিজুর। মোহর কিনে কলকাতায় ফেরেন হাফিজুর। এ বার অবশ্য স্বর্ণকাররা জানিয়ে দেন, সবকটিই তামার কয়েন। সোনালি রং করা মাত্র। ৬ লক্ষ টাকা খুইয়ে ভেঙে পড়েন হাফিজুর। রাজুর সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা যায়নি। বাধ্য হয়ে তিনি স্থানীয় বেনিয়াপুকুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার ভিত্তিতে পুলিশ প্রতারণা, জালিয়াতি, অপরাধমুলক ষড়যন্ত্রের মতো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু  অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় মামলার তদন্তভার কলকাতা পুলিসের জালিয়াতি দমন শাখার গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, আগেও বীরভূম, বর্ধমান জেলায় মোহর বিক্রির টোপ দিয়ে প্রতারণা, অপহরণের মতো অপরাধ হয়েছে। প্রতারিত হয়েও শুধু লজ্জায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেননি অনেকে। এবার সেই চক্রের সদস্যরা কলকাতায় হানা দিয়েছে।

Comments are closed.