গণতন্ত্র প্রশ্নে মোদীকে বিঁধে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য উল্লেখ করে ট্যুইট জগদীপ ধানকরের! কাকে বার্তা দিলেন বাংলার রাজ্যপাল, জল্পনা
মোদী সরকারের তীক্ষ্ণ সমালোচক হিসেবে একেবারে প্রথম সারিতে নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। গোধরা পরবর্তী ঘটনাই হোক, কিংবা নোটবন্দি থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ, বারবার অধ্যাপক সেনের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপি। বিজেপিও অমর্ত্য সেনকে পাল্টা আক্রমণ করেছে বারবার। অর্থনীতিবিদকে লক্ষ্য করে উড়ে এসেছে ব্যক্তিগত আক্রমণও। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবধি অমর্ত্য সেনকে আক্রমণে কসুর করেননি। আর ভোট প্রচারে বেরিয়ে হার্ভার্ডের অমর্ত্যর সমালোচনার জবাব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী হার্ড ওয়ার্কের ভাষণের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু তাতে পিছু হঠেননি অর্মত্য সেন। একেবারে প্রথম দিন থেকে মোদী সরকার এবং বিজেপির রাজনীতির ঘোর বিরোধী অধ্যাপক সেনের সাক্ষাৎকার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউইয়র্কারে। আইস্যাক চোটিনারকে দেওয়া ৬ ই অক্টোবরের সাক্ষাৎকারে মোদী সরকারের কর্মপদ্ধতির কড়া সমালোচনার পাশাপাশি বদলে যাওয়া ভারত নিয়েও নিজের মত ব্যক্ত করেছেন অমর্ত্য সেন।
আর সেই প্রেক্ষিতেই এই গোটা ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধানকরের একটি ট্যুইট। সম্প্রতি জন্মদিন গেল অমর্ত্য সেনের। অধ্যাপক সেনকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধানকর এক ট্যুইট করেন। মোদীর আমলে ভারত এবং গণতন্ত্রের অবস্থা বোঝাতে চোটিনারকে বলা অধ্যাপক সেনের কিছু কথাই হুবহু উঠে এসেছে ধানকরের শুভেচ্ছা বার্তায়। আর তাতেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, মোদীরাজকে কটাক্ষ করে বলা অমর্ত্য সেনের কিছু কথা তুলে ধরে আসলে কাকে বার্তা দিলেন বাংলার রাজ্যপাল? এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ, সম্প্রতি একাধিক ঘটনা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন ধানকর। এমনকী রাজ্যে গণতন্ত্র আক্রান্ত বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
কিন্তু কী বলেছিলেন অমর্ত্য সেন, যা উল্লেখ করে ট্যুইট করলেন ধানকর? চোটিনারের প্রশ্ন ছিল, ট্রাম্প বা এর্ডোগানের মতো নয়, বরং মোদী তো ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন। দেশে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা। তারই উত্তরে অধ্যাপক সেন জানিয়েছেন, দেশের জনসংখ্যার বিন্যাস এবং মোদীর নির্বাচনী জনপ্রিয়তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সেই সূত্রেই তিনি জানিয়েছেন, ‘জন স্টুয়ার্ট মিল বর্ণিত গণতন্ত্র, যা বলে গণতন্ত্র আসলে আলোচনার পরিসরকেই বিস্তৃত করে। কিন্তু আপনি যদি আলোচনাকেই ভয়ের ব্যাপার বানিয়ে ফেলেন, যেভাবেই ভোট গুনুন না কেন, গণতন্ত্র আপনার জন্য নয়।’ মোদীর আমলে ভারতের গণতন্ত্রের বাস্তব চেহারা বোঝাতেই এই উপমা ব্যবহার করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
এবার অধ্যাপক সেনের ৬ ই অক্টোবরের সাক্ষাৎকারের এই অংশ হুবহু তুলে ধরে জগদীপ ধানকর ঠিক কাকে খোঁচা দিলেন, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। অমর্ত্য সেন কোনও রাখঢাক না করে, এই মন্তব্য করেছেন ভারতের মোদী সরকারের দিকে। জগদীপ ধানকরও কি এই মন্তব্যকে মোদী সরকারের প্রতি পরামর্শ হিসেবেই উল্লেখ করলেন? নাকি তাঁর মন্তব্যের অভিমুখ অন্য? বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা, গণতন্ত্রে আলোচনা পরিবেশ জরুরি, একথা বলে ধানকর আসলে মমতা ব্যানার্জির সরকারকেই বার্তা দিয়েছেন। কারণ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে ধানকরের বিরোধের ঘটনা নতুন কিছু নয়।
এদিকে যে অমর্ত্যকে লাগাতার আক্রমণ করে থাকে বিজেপি, তাঁর জয় শ্রী রাম নিয়ে করা মন্তব্যকে হাতিয়ার করে শহরজুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে হোর্ডিংও দিয়েছিল তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে মোদীর কর্মপন্থার সমালোচনা করে বলা অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের একটি মন্তব্যকে রাজ্যপাল ধানকরও ট্যুইটে ব্যবহার করে, আসলে কাকে বার্তা দিতে চাইলেন, তা নিয়েই এখন জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
Comments are closed.