টাইম ম্যাগাজিনের পর দ্য গার্ডিয়ানেও তীব্র সমালোচনা মোদীর, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিশানায় কেন বারবার বিজেপি শাসন?
আমেরিকার পর এবার ইংল্যান্ড। টাইম ম্যাগাজিনে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে প্রচ্ছদ ঘিরে বির্তকের রেশ মিটতে না মিটতেই এবার মোদীকে তীব্র আক্রমণ করে প্রবন্ধ ছাপল দ্য গার্ডিয়ান।
সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মোদীকে দ্য গ্রেট ডিভাইডার আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এবার ২১ শে মে, মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ানের ওপিনিয়ন বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে Five more years of Narendra Modi will take India to a dark place শীর্ষক প্রবন্ধ। লিখেছেন কপিল কোমি রেড্ডি। তাঁর আশঙ্কা, যদি নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে ভেদাভেদের রাজনীতি এবং ধর্মান্ধতাই হয়ে উঠবে প্রজাতন্ত্রের মূল সুর।
কিন্তু বারবার কেন মোদী এবং বিজেপির রাজনীতিকে কেন নিশানা করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, সেই প্রশ্নও তুলছেন দেশের একাংশ। বিজেপি বা এনডিএ শিবির তো বটেই, তার বাইরে থেকেও প্রতিক্রিয়া আসছে, এমন একমাত্রিক আক্রমণের যৌক্তিকতা আছে কিনা। মোদীপন্থীদের অভিযোগ, আমেরিকায় ট্রাম্প কিংবা ব্রিটেনে ব্রেক্সিট, দু’ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ভাবনার উত্থান হয়েছে। ফলে সেই দেশের মিডিয়ার আদৌ মোদী-সমালোচনা করার এক্তিয়ার রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রবন্ধে কপিল কোমি রেড্ডি দাবি করেছেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি সর্বোপরি তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ৫ বছর বাদে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো কেবল প্রতিশ্রুতিই ছিল। কপিল কোমি রেড্ডি বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নজিরবিহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও যে প্রতিশ্রুতিকে সত্যি ভেবে ভোটাররা ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়নি। প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, মোদী ২ কোটি কর্মসংস্থানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তব হল, মোদী-রাজে বেকারত্বের হার গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মোদী তরুণ প্রজন্মকে স্মার্ট সিটির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা বাস্তবে লাল ফিতের ফাঁসে আটকে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে মোদীর আমলে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দখলদারি চালানো হয়েছে। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কথা। বলা হয়েছে, ১৯৫২ সাল থেকে কীভাবে কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সেই প্রতিষ্ঠানকেও কার্যত হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করছেন কপিল। সেনাকে ভোট ভিক্ষার কাজে লাগানো হচ্ছে, অভূতপূর্ব বিপদের মুখে দেশের বিচারবিভাগ। প্রবন্ধে মনে করানো হয়েছে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার সময়ের কথা।
রবিবার অধিকাংশ এক্সিট পোল ইঙ্গিত দিয়েছে, নরেন্দ্র মোদী অনায়াসে ক্ষমতায় ফিরছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলে, তাঁকে ভোট দেবেন কেন মানুষ? কপিল কোমি রেড্ডি বলছেন, এখানেই তুরুপের তাস বের করেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর তা হল, ধর্মান্ধতা। প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক। কপিলের মতে, ভারতের হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশের মধ্যে একটা জিনিস সুকৌশলে পৌঁছে দিতে পেরেছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, তা হল, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মোদী মুসলিমদের নিজের জায়গা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
আর সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে এই মনোভাব একবার জায়গা করে নিতে পারলে, বাকিটা নরেন্দ্র মোদী নির্ধারিত পথেই চলতে থাকবে, মনে করেন কপিল কোমি রেড্ডি। আর তাই, ভোটের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলেও সামগ্রিকভাবে মোদীর উপর ভরসা হারাননি হিন্দু ভোটারদের একটা বড় অংশ। আর এবার ভোটে মোদীর সাফল্যের অর্থ হল, ভারত নামক প্রজাতন্ত্রের মূল সুর হয়ে উঠতে চলেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ।
Comments are closed.