করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা নিয়ে গুজরাত সরকারকে তুলোধোনা করা ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি বদল, সমালোচনায় বিরোধীরা
বিভিন্ন রাজ্য যখন নমুনা পরীক্ষার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে, তখন গুজরাতে কম নমুনা পরীক্ষার অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়। এই নিয়ে কিছুদিন আগেই সে রাজ্যের বিজেপি সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আচমকা সেই ডিভিশন বেঞ্চের এক বিচারপতিকে অন্য বেঞ্চে সরিয়ে দেওয়া হল। ওই বেঞ্চের দুই সদস্য ছিলেন যথাক্রমে বিচারপতি জে বি পরদিওয়ালা আর বিচারপতি আই জে ভোরা। গুজরাত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিক্রম নাথ বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশ জারি করে ওই বেঞ্চ থেকে বিচারপতি ভোরাকে সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বদলে তিনি নিজে থাকছেন ওই বেঞ্চে। এখন সিনিয়রিটির বিচারে প্রধান বিচারপতিই ওই বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকবেন। আর বিচারপতি পরদিওয়ালা থাকছেন বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতি হিসেবে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে আচমকাই বিচারপতিদের রোস্টারে এমন পরিবর্তন করা হয় বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
বিরোধীরা বলছেন, রুপানি সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন বিচারপতি পরদিওয়ালা। তিনিই ছিলেন ডিভিশন বেঞ্চের প্রধান। কিন্তু এখন প্রধান বিচারপতি সেই বেঞ্চে আসায়, স্বভাবতই সিনিয়রিটির বিচারে প্রধান বিচারপতিই হবেন ডিভিশন বেঞ্চের প্রধান। কংগ্রেসের অভিযোগ, এখানেই লুকিয়ে রাজনীতির প্যাঁচ।
আহমেদাবাদে কেন যথেষ্ট সংখ্যায় নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না, তা নিয়ে হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলির সংগঠনও প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের কাছে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি চাইলে তিনদিন পরে সাড়া মিলছে। তা-ও মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়েই গুজরাত হাইকোর্টে মামলা হয়। গত ২২ মে এই মামলার শুনানিতে রাজ্যের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে ওই গুজরাত হাইকোর্টের ওই ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করে, একটা অন্ধকূপের মতো অবস্থা, কিংবা তার থেকেও হয়ত খারাপ। ডিভিশন বেঞ্চ আরও বলে, খুব খারাপ লাগছে এটা বলতে যে, আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালের অবস্থা এই মুহূর্তে অত্যন্ত করুণ। গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নীতিন পটেল ও স্বাস্থ্য সচিব জয়ন্তী রবির ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করে হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছিল, কেন তাঁরা বেশি করে হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি দেখছেন না? কোভিড পরীক্ষা কেন কম হচ্ছে, এর উত্তর দিতে গিয়ে গুজরাত সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল কমল ত্রিবেদীর যুক্তি ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবেই কম টেস্ট করানো হচ্ছে। বেশি পরীক্ষা হলে ৭০ শতাংশই কোভিড পজিটিভ বেরোবে। তাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে বলে সওয়াল করেন তিনি।
গুজরাতে এখনও পর্যন্ত কোভিড ১৯ এ মারা গিয়েছেন ৯৬০ জন, এঁদের মধ্যে আহমেদাবাদেরই ৭৬০ জন। আর শুধুমাত্র আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে মারা গিয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুজরাতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৭। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ১৫ হাজার ৫৬২। অর্থাৎ, নমুনা পজিটিভ হওয়ার হার ৭.৮ শতাংশ, যা ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যের থেকে ঢের বেশি। আহমেদাবাদের ছবিটা আরও খারাপ। এই শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৩৪৪। নমুনা পজিটিভ হওয়ার হার ১৪.৬ শতাংশ।
এতে গুজরাতের বিজেপি সরকার যে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই প্রেক্ষিতে সরকারের সমালোচনা করা হাইকোর্টের বেঞ্চের বিচারপতিকে বদলি করা হল। এই ঘটনায় বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দিল্লি দাঙ্গায় বিজেপি নেতাদের ভূমিকা নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণের পরই রাতারাতি বিচারপতি বদলের ঘটনার কথা। তাঁদের অভিযোগ, মোদীর আমলে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এখন স্রেফ খাতায় কলমে, বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই।
Comments are closed.