সঞ্জীব গোয়েঙ্কার আরপি গোষ্ঠী পরিচালিত ওপেন ম্যাগাজিনের পলিটিকাল এডিটার হরতোষ বালকে ছাঁটাই করার জন্য কর্তৃপক্ষকে জরিমানা
সাংবাদিক হরতোষ সিংহ বাল বনাম সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মালিকানাধীন ওপেন ম্যাগাজিন মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিল্লির আদালতের। ওপেন ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করল আদালত। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ওপেন ম্যাগাজিন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তৎকালীন পলিটিকাল এডিটার হরতোষ সিংহ বালকে। তারপরই মামলা করেন তিনি। ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের অবসানে, অবশেষে জয় পেলেন সাংবাদিক হরতোষ সিংহ বাল।
গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে একাধিক সিনিয়র সাংবাদিক এবং সম্পাদককে ছাঁটাই করার ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক কারণে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে সিনিয়র সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের।
২০১৩ সালের নভেম্বরে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মালিকানাধীন আর পি গোষ্ঠী পরিচালিত ওপেন ম্যাগাজিনের পলিটিক্যাল এডিটর হরতোষ সিংহ বালকে চাকরি ছাড়তে বলে কর্তৃপক্ষ। হরতোষ সিংহ বাল ট্যুইট করে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে নিঃশব্দে চাকরি ছাড়ার কথা বলা হয় ওপেন ম্যাগাজিনের ম্যানেজমেন্টের তরফে। সেই সময় ওপেন ম্যাগাজিনের পলিটিক্যাল এডিটর হরতোষ সিংহ বাল নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গান্ধীকে নিয়ে ‘দ্য হিরো অ্যান্ড দ্য প্রিন্স’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এই প্রতিবেদনের জন্যই তাঁকে চাকরি হারাতে হল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
সংস্থার প্রস্তাব মতো ১৫ লক্ষ টাকা না নিয়েই চাকরি ছেড়ে দেন সিনিয়র সাংবাদিক হরতোষ সিংহ বাল। তাঁর অভিযোগ ছিল, কলকাতার শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মালিকানাধীন ওপেন ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাঁটাই করার পিছনে কোনও কারণ দেখানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি। এরপরই দিল্লির একটি আদালতে ওপেন ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সিনিয়র সাংবাদিক হরতোষ সিংহ বাল।
আদালতে ওপেন ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ সওয়াল করে, দুই পক্ষের মধ্যে ২০০৮ সালে সাক্ষর হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে সংস্থা কোনও কারণ না দেখিয়ে ছাঁটাই করতে পারে। কিন্তু আদালত ওপেন কর্তৃপক্ষের এই যুক্তিকে মান্যতা দেয়নি। আদালত বলেছে, ২০১১ সালে হরতোষ সিংহ বালের পদোন্নতি হয়েছিল। ফলে এটা ধরে নেওয়া যায়, ভালো পারফরমেন্সের নিরিখেই হরতোষ সিংহ বাল পদোন্নতি পেয়েছেন। তাই ২০১৩ সালে পারফর্মেন্সের দোহাই দিয়ে ছাঁটাই কতগুলো প্রশ্নের জন্ম দেয়। এরপরই আদালত হরতোষ বালের ছাঁটাইকে বেআইনি বলে আখ্যা দিয়ে তাঁকে ৬ মাসের নোটিস পে অর্থাৎ, ১৪.৫ লক্ষ টাকা এবং হেনস্থার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ১০ লক্ষ টাকা দিতে ওপেন ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।
আদালতের রায়ের পর সিনিয়র সাংবাদিক হরতোষ সিংহ বাল পরপর কয়েকটি ট্যুইট করেন। তাতে তিনি লেখেন, আদালতের এই রায়ের পর একটা জিনিস পরিষ্কার, কন্ট্রাক্ট বা চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনও কর্মীকে কারণ না দেখিয়ে ছাঁটাই করা হলে, সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া যায়। শুধু প্রয়োজন একটু সময় এবং সমর্থন। হরতোষ সিংহ বাল তাঁর আইনজীবী রাঘব আওয়াস্তিকেও পাশের থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর ট্যুইট, সেই সময় আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা আমার ছিল না। তবুও রাঘব পাশে ছিলেন। পাশাপাশি হরতোষ সিংহ বালের মন্তব্য, ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাক্টকে টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মিডিয়াতেও লাগু করতে হবে। ছাঁটাই কখনও একতরফা হতে পারে না। তাই সাংবাদিকদের রক্ষাকবচ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন, মনে করেন তিনি।
২০১৩ সালে ওপেন ম্যাগাজিন ছাড়ার পর হরতোষ সিংহ বাল বর্তমানে দ্য কারাভ্যানে পলিটিক্যাল এডিটর হিসেবে কর্মরত।
Comments are closed.