গত ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় এক কর্নেল-সহ ২০ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে ভারত চিন দ্বৈরথ। একদিকে চিনা পণ্য বয়কট করে সার্বিকভাবে চিন বিরোধিতার ডাক দিয়েছে ভারত, পাল্টা ভারতের সংবাদমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে চিনা সরকার। এই অবস্থায় চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ হল Eurasian Times এ। প্রতিবেদনের দাবি, গালওয়ানের পর হিমাচলপ্রদেশের ভারত-চিন সীমান্ত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে।
চিনের সঙ্গে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার সীমানা ভাগ করে হিমাচল। ভারত ইতিমধ্যেই চিন সেনার হানাদারির আশঙ্কা মাথায় রেখে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষকে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া সহ একাধিক পদক্ষেপ করছে ভারত। এমনই তথ্য উঠে এসেছে এশিয়া প্যাসিফিক এলাকার ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম Eurasian Times এর এক প্রতিবেদনে।
গালওয়ানে ফেসঅফের প্রেক্ষিতে আগেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল হিমাচলপ্রদেশের ভারত-চিন সীমান্ত এলাকায়। সীমান্তবর্তী সব এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি হিমাচলপ্রদেশ পুলিশকেও সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বিভিন্ন সিক্রেট এজেন্সি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা এক বিশেষ নির্দেশিকায় লাহুল, স্পিতি ও কিন্নরের মানুষকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও স্পর্শকাতর প্রতিটি অঞ্চলে হিমাচল পুলিশ এবং ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে বলেও খবর।
সম্প্রতি চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির স্যাটেলাইট ফোন যোগাযোগ দু’বার ভেস্তে দিয়েছে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। হিমাচলপ্রদেশের কিন্নর জেলার শিপকি লা অঞ্চল থেকে স্যাট ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। Eurasian Times এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পিএলএ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা LAC বিবাদ জিইয়ে রাখার লক্ষ্য নিয়ে হিমাচলপ্রদেশে ভারত-চিনের সীমান্ত থাকা দুই জেলা লাহুল-স্পিতি এবং কিন্নরের উপর বিশেষ নজর রাখছে।
হিমাচলপ্রদেশের ডিজি সঞ্জয় কুণ্ডু ১২ টি ‘হাই পয়েন্ট’ চিহ্নিত করে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ ও রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ প্রশিক্ষিত, আঞ্চলিক ভাষা জানা অফিসারদের মোতায়েন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
Eurasian Times কে ডিজি সঞ্জয় কুণ্ডু জানিয়েছেন পাঁচ আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে বাছাই করা কর্মীরা ১০ দিনের জন্য সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে ক্যাম্প করে। স্থানীয় সূত্র থেকে তাঁরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করেছেন। এছাড়া পিএলএর হামলা প্রতিহত করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের গেরিলা ওয়ারফেয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। কাশ্মীরে যেমন গ্রামীণ প্রতিরক্ষা বাহিনী (VDC) গঠন করা হয়েছিল, হিমাচলের ক্ষেত্রেও সেই একই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি।
কেন হিমাচল সুরক্ষিত নয়, এই প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা নজর ঘুরিয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার অনুন্নয়নের দিকে। প্রতিবেদন বলছে, এই সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় উন্নয়নে সরকারি মনোযোগের অভাব আছে। শুধুমাত্র পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল ওই এলাকাগুলির প্রচুর মানুষ ভালো শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের খোঁজে দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছেন। আর যাঁরা রয়ে গিয়েছেন তাঁদের জীবনধারায় উন্নয়নের অভাব যথেষ্ট। আস্তে আস্তে এই গ্রামগুলি থেকে জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় সেখানকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা প্রশাসনের কাছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
Comments are closed.