সোনভদ্রে যাওয়ার পথে বাধা পেয়ে বারাণসীর চুনার ফোর্টের অতিথিশালায় রাত কাটিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কেল্লার অতিথিশালায় দলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গেই থেকেছেন প্রিয়াঙ্কা। তবে হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের আনাগোনা অবশ্য এই প্রাচীন কেল্লায় নতুন নয়।
উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর জেলায় অবস্থিত চুনার ফোর্টকে অনেকেই চন্দ্রকান্তা চুনারগড় অথবা চরণাদ্রি বলে ডাকেন। বারাণসী থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গঙ্গার ধারে অবস্থিত চুনার ফোর্টের সঙ্গে জড়িয়ে একাধিক ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
বেলে পাথরের এই দুর্গের নির্মাতা কে, ইতিহাসে তা নিয়ে রয়েছে একাধিক তত্ত্ব। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, রাজা হর্ষবর্ধনের আমলে চুনার ফোর্টের নাম জানাজানি হয়। ভূগর্ভস্থ বন্দিশালা, ফাঁসির মঞ্চ, পাতালঘর, গভীর ইঁদারা ও ৫২ স্তম্ভের সোনওয়া মহল পেরিয়ে দুর্গের শীর্ষে পৌঁছলে দূর থেকে বয়ে চলা গঙ্গা ও চুনার শহরের অপরূপ ছবি ভেসে ওঠে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ নাকি ভূভারতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঐতিহাসিকদের একাংশ বলেন, খ্রিস্টপূর্ব ৫৬ সাল থেকে এই দূর্গের হদিশ পাওয়া যায়। তারপর কখনও শের শাহ সুরি, আবার কখনও মুঘল সম্রাট হুমায়ুন, আকবর। এই দূর্গের দখল নিয়ে কম রক্ত ঝরেনি। শেষ পর্যন্ত এই কেল্লা দখল করে ইংরেজরা।
Related Posts
১৭৭৫ নাগাদ দ্বিতীয় বেনারস চুক্তির আওতায় আনুষ্ঠানিকভাবে বারাণসী ও চুনারকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মূলত কলকাতার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে এবং গঙ্গায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে চুনার ফোর্ট। তবে দেশে রেলপথ প্রচলনের পর থেকেই গুরুত্ব হারাতে থাকে চুনার। পরবর্তীতে জলপথ পরিবহণের কেন্দ্রস্থল চুনার থেকে সরে আসে কলকাতায়। তবে চুনা পাথরের বিশাল যোগানের কারণে, বরাবরই এই কেল্লা এবং সংলগ্ন পাথুরে এলাকা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছে। এই এলাকা থেকেই পাথর নিয়ে গিয়ে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় মজজিদ, প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন মুঘলরা। পরবর্তীকালে ইংরেজদেরও নজর এড়ায়নি চুনা পাথরের ভাণ্ডার।
১৮৮৮ সালে বারাণসীর বাসিন্দা বাবু দেবকীনন্দন খাত্রি লেখেন প্রথম হিন্দি উপন্যাস। নাম দেন চন্দ্রকান্তা। এই উপন্যাসে চুনার ফোর্টকে তিলিসমি কেল্লা বা জাদু দূর্গ হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রবল জনপ্রিয় চন্দ্রকান্তার কারণেই এই দূর্গকে চন্দ্রকান্তা চুনারগড় নামেও অভিহিত করা হয়। সম্প্রতি গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ছবির বেশ কয়েকটি দৃশ্য শ্যুট হয়েছে এই দূর্গে।
Comments are closed.