ক্রমেই জটিল হচ্ছে হংকং পরিস্থিতি। হংকং প্রশাসনের তরফে আন্দোলনকারীদের দাবি মানার কোনও লক্ষণ নেই। রবিবার তা চরমে পৌঁছয়। পথে নামা হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেলের পাশাপাশি এই প্রথম ব্যবহার হল জল কামান। উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দিতে শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে পুলিশ। রবিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে ২৯ জন পুরুষ এবং ৭ মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া মানুষের মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের বালকও।
এদিকে লাগাতার ৩ মাস ধরে চলা অশান্তির জেরে টালমাটাল এশিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানীর তকমাও। এরইমধ্যে কপালে ভাঁজ আরও বাড়িয়ে আলিবাবা জানিয়ে দিল, হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্তি পিছিয়ে দিচ্ছে তারা।
গত প্রায় ৩ মাস ধরে চিন বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হংকং। গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় পুলিশ ঢালাওভাবে ব্যবহার করছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। কিন্তু নাছোড় আন্দোলনকারীদের বাগে আনতে পারেনি হংকং প্রশাসন। অর্থনীতিবিদরা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে প্রভাব পড়বে হংকংয়ের সামগ্রিক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে। অর্থনীতিবিদদের সেই আশঙ্কা সত্যি করে এবার হংকং শেয়ার বাজারে নথিভুক্তি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেল চিনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা। হংকং স্টক এক্সচেঞ্জে জ্যাক মার সংস্থার ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তোলার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হংকংয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আলিবাবা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে আলিবাবা সূত্রে খবর। তবে শুধু আলিবাবাই নয়, হংকং পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থাগুলিও। কদিন আগেই হংকংয়ের নিজস্ব বিমান সংস্থা ক্যাথে প্যাসিফিকের সিইও ইস্তফা দিয়েছেন। ক্যাথের কর্মীদের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলনকারীদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ করেছে চিন। শুধু তাই নয়, চিনের মূল ভূখণ্ডে ক্যাথের উড়ানের উপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে বেজিং, এই খবরও শোনা যায়। বুধবার ক্যাথে প্যাসিফিক জানিয়েছে, গত বছর জুলাই মাসে তাদের বিমানে যত যাত্রী যাতায়াত করতেন, এ বছর তা লক্ষণীয়ভাবে কমে গিয়েছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রী সংখ্যা কমার মূল কারণ হংকংয়ে অস্থির সামাজিক পরিস্থিতি। চাপ আরও বাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ান উড়ান সংস্থা কোয়ানটাস জানিয়েছে, তাদের হংকংগামী বিমানে আসন ভরছে না। বছরের অন্যান্য সময় যা অকল্পনীয় ছিল।
এদিকে চিনও চুপ করে বসে নেই। চিনের জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সরাসরি পিডব্লুসি এবং ডেলোয়েটকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কর্মীরা যেন কোনওভাবেই হংকংয়ের আন্দোলনে জড়িয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে।
Comments are closed.