করোনা: টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে দ্য কুইন্ট, একাধিক মিডিয়ায় সাংবাদিক থেকে কর্মী ছাঁটাই, কমছে বেতন
করোনার কোপ? দেশের তাবড় তাবড় মিডিয়া হাউস শুরু করল ছাঁটাই, কমাচ্ছে কর্মীদের বেতন।
করোনার প্রকোপ রুখতে গত ২৪ মার্চ থেকে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবারই তা বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এই টানা লকডাউনের জেরে ছোট, মাঝারি থেকে বড়, প্রায় সমস্ত বেসরকারি ক্ষেত্রেই ব্যবসার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার থেকে রাষ্ট্র সংঘ সকলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, করোনা এবং পরবর্তী সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরি যেতে পারে গোটা বিশ্বে।
এবার দেশের একাধিক ক্ষেত্রের মতো লকডাউনের মধ্যেই বিভিন্ন বিখ্যাত সর্বভারতীয় মিডিয়া সংস্থাও নিল ছাঁটাইয়ের রাস্তা, কেউ আবার কমিয়ে দিল সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মীদের বেতন। কে নেই এই তালিকায়? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার মতো প্রাচীন সংস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই, দ্য কুইন্টের মতো নামী নিউজ পোর্টালও রয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া গ্রুপে ছাঁটাই
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার নিউ দিল্লির অফিসের পুরো ‘সানডে ম্যাগাজিন’ টিমকেই চাকরি ছাড়তে বলা হয়েছে বলে খবর। শুক্রবার টাইমস অফ ইন্ডিয়ার অন্যতম সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর নোনা ওয়ালিয়া একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ২৪ বছর ধরে যে অফিসের জন্য ভালোবেসে কাজ করলেন, রাতারাতি তারা ছাঁটাইয়ের খবর দিল! শুক্রবার টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রবিবারের ক্রোড়পত্রের দায়িত্বে থাকা দুই এডিটর ও একজন ডিজাইনারকে মৌখিকভাবে কাজ ছাড়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে Newslaundry নিউজ পোর্টাল সূত্রে খবর। কাজ ছাড়তে বলা এমনই এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে তারা লিখেছে, গত ছ’সাত মাস ধরে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রাজস্ব কমছিল। আর কোভিড-১৯ কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিল। তবে ওই কর্মীর দাবি, অসুবিধা সত্ত্বেও এখনও টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রবিবারের চারপাতার ঝকঝকে ‘লাইফ’ সাপ্লিমেন্টের সার্কুলেশন প্রায় ১০ লক্ষ। কিন্তু ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণার পর থেকে চার পেজের ‘লাইফ’ ক্রোড়পত্র এক পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে। সেটাও এবার সংস্থার ‘দিল্লি টাইমস’ থেকে ছাপা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পর তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে।
Newslaundry কে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ছাঁটাই হওয়া আর এক কর্মীর জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে নতুন করে চাকরি খুঁজতেও তিনি পারবেন বা। আর এমন নয় যে তিনি সদ্য কাজ শুরু করেছেন। তাই যে কোনও জায়গায় স্বল্প বেতনেও চলে যেতে পারবেন না। এখন তাঁর করণীয় কী সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে স্যালারি কাট
শুধু টাইমস অফ ইন্ডিয়া নয়, একই সঙ্কটের মুখে পড়েছেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, আউটলুক, ইন্ডিয়া টু ডে-র মতো বহুল প্রচারিত বিখ্যাত সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের কর্মীরা। এপ্রিল মাস থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কর্মীদের বেতন কম করা হবে বলে জানানো হয়েছে বলে খবর।এদিকে ৩০ এপ্রিল থেকে হিন্দুস্তান টাইমস মারাঠির সমস্ত কর্মীকে ছুটিতে চলে যেতে বলা হয়েছে বলে জোর চাপান-উতোর চলছে। যদিও হিন্দুস্তান টাইমস প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কিচ্ছু জানায়নি। করোনার জেরে সার্কুলেশন কমে গিয়েছে, তাই ইংরেজি ম্যাগাজিন আউটলুক তাদের মুদ্রণ প্রকাশনা বন্ধ রাখছে। সঙ্কটে পড়েছেন সেখানকার কর্মীরা। গত ১০ এপ্রিল হিন্দি নিউজ চ্যানেল ‘নিউজ নেশন’ তাদের ইংরেজি ডিজিটাল বিভাগের ১৫ জন সাংবাদিককে বিনা নোটিসে ছাঁটাই করে দিয়েছে বলে The Print নিউজ পোর্টালের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ। এমমকী তাদের নোটিস পিরিয়ডও দেওয়া হয়নি। এক মাসের বেসিক স্যালারি দিয়ে তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। Newslaundry কে ওই সংবাদ সংস্থার এডিটর ইন চিফ মনোজ গাইরোলা বলেন, করোনার কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ছাঁটাই ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা ছিল না তাঁদের হাতে।
ইন্ডিয়া টু ডে’ও মোট ৪৬ জন রিপোর্টার, ৬ জন ক্যামেরাম্যান, ১৭ জন প্রোডিউসারকে ছাঁটাইয়ের তালিকা বানিয়েছে বলে খবর।
The Quint এর অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই
নিউজ ওয়েবসাইট The Quint তাদের ৪৫ জন কর্মীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়েছে বলে খবর। সেই তালিকায় রয়েছেন সম্প্রতি সাংবাদিকতায় সাম্মানিক পুরস্কার পাওয়া এক রিপোর্টার, কপি এডিটর, একজন ব্যুরো চিফ, প্রোডাকশন কর্মী থেকে শুরু করে টেকনোলজি টিম।
Newslaundry কে সংশ্লিষ্ট নিউজ ওয়েবসাইটের সিনিয়র একজিকিউটিভ জানিয়েছেন, এই ৪৫ জন কর্মীকে তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে ছুটিতে পাঠিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তাঁরা অতিমারি করোনাভাইরাসকে দায়ী করে বলেন, আগামী তিন চার মাস সংস্থার রাজস্বে ভীষণ টান পড়বে। তাই আগেভাগে এই সিদ্ধান্ত। এই অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো কর্মীরা তাঁদের ইপিএফ ভাঙাতে পারবেন, তাঁদের মেডিকেল ইনস্যুরেন্সও অ্যাক্টিভ থাকবে। এই সময়ে ওই কর্মীরা চাইলে, The Quint এর প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন ওই সিনিয়র একজিকিউটিভ।
সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের আর্জি
বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় এই ঢালাও কর্মী ছাঁটাই, কর্মীদের বেতনের ওপর কোপের ঘটনায় নির্দেশিকা চেয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে চিঠি পাঠিয়েছেন পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণীশ তেওয়ারি। ১৩ এপ্রিল পাঠানো এই চিঠিতে তিনি লেখেন, সমস্ত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করা কর্মীদের উপর যাতে প্রভাব না পড়ে তার জন্য অ্যাডভাইজরি জারি করুক কেন্দ্র। কয়েকদিনের লকডাউনের জন্য কর্মীদের বেতন কেটে নেওয়া, ছাঁটাই করা, কাউকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তকে কোনওভাবে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয় বলে কেন্দ্রকে জানান মণীশ তেওয়ারি।
Comments are closed.