মাত্র ৮০ টাকা ধার করে যাত্রা শুরু ৭ ‘আশ্চর্য’ গিন্নির, জিভে জল আনা লিজ্জত পাঁপড় এখন দেড় হাজার কোটির ব্র্যান্ড
হলোই বা পঞ্চব্যঞ্জন পদ, কিন্তু শেষ পাতে চাটনি সহযোগে পাঁপড় না হলে কিছু একটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর পাঁপড় প্রেমী হয়ে ‘লিজ্জত পাঁপরের নাম শোনেননি এরকম উদাহরণ চট করে পাওয়া যাবে না। স্বাদের মতো ‘লিজ্জত পাঁপড়ের’ যাত্রাও এক কথায় চমকপ্রদ। মাত্র ৮০ টাকা ধার নিয়ে ৭ জন গিন্নি যে ব্যবসা শুরু করেছিলেন আজ তার বাৎসরিক টার্ণভার দেশের তাবড় তাবড় কোম্পানিকেও বলে বলে গোল দেবে। ৮০ টাকার ব্যবসার বর্তমান লেনদেন ১,৬০০ টাকা কোটি।
১৯৬৯ সাল। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা জসবন্তী যমুনা দাস বাকি ৬ বান্ধবীকে নিয়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা শুরু করলেন। উদ্দেশ্য, নিজেদের টানাটানির সংসারে কিছুটা রোজগার বাড়ানো। কিন্তু ৭ জনের কেউ সেই অর্থে পড়াশোনা করেননি। বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করবেন, তখনকার সমাজ ব্যবস্থায় সেটাও এক প্রকার অসম্ভব চিন্তা। অতএব জসবন্তী যমুনা দাস এবং তাঁর ৬ বান্ধবী পার্বতীবেন রামদাস ঠোদানি, উজমবেন নরানদাস কুণ্ডুলিয়া, বানুবেন তত্ৰা, লাগুবেন অমৃতলাল গোকানি, গয়াবেন বিঠলানি নিজেদের পাঁপড় তৈরির দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই শুরু করে দিলেন ব্যবসা। এই সাত জন ছাড়াও দলে যোগ দিলেন আরও এক। যিনি স্থানীয় দোকানে পাঁপড় বিক্রির দায়িত্ব নিলেন।
সংস্থার এক কর্তা জানান, যমুনা দাস এবং তাঁর ৬ বান্ধবী প্রথমে মাত্র ৪ প্যাকেট পাঁপড় প্রস্তুত করে স্থানীয় এক দোকানে বিক্রি করেন। তার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁদের। মধ্যবিত্ত সংসারে রোজগার বাড়াতে যে উদ্যোগের পথ চলা শুরু আজ সেই লিজ্জত পাঁপড় দেশের প্রায় ৫০ হাজার মহিলার কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মহিলারা ‘লিজ্জত সিস্টার’ নামে পরিচিত। মহিলাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কার্যত পথ দেখাচ্ছে লিজ্জত পাঁপড়। নারী ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ৯১ বছর বয়সে এসে পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন সংসার অন্যতম কর্ণধার জসবন্তী যমুনা দাস।
লিজ্জত পাঁপড়ের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এই পাঁপড় তৈরিতে কোনও যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। পুরোটাই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ‘লিজ্জত সিস্টাররা’ নিজের হাতে করে থাকেন। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁপড় প্রস্তুত করার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মানা হয়ে থাকে। সংস্থার গাড়িতে করে লিজ্জত সিস্টাররা তাঁদের নিকটবর্তী শাখায় পৌঁছে যান। সেখানে মূলত তিনটি কাউন্টার থাকে। বাড়িতে তৈরি পাঁপড় প্রথম কাউন্টারে জমা দেন মহিলারা। এরপর সেখান থেকে একটি কুপন দেওয়া হয় তাঁদের। সেটি নিয়ে দ্বিতীয় কাউন্টারে গিয়ে পারিশ্রমিক নেন। তারপর তৃতীয় কাউন্টার থেকে পাঁপড় তৈরির জন্য মেখে রাখা আটা সংগ্রহ করতে হয়। স্বাদের গুনগত মান একই রাখার জন্য এই ব্যবস্থা। বর্তমানে দেশের ১৭ টি রাজ্যের পাশাপাশি প্রায় ২৫ টি দেশেও লিজ্জত পাঁপড় পাওয়া যায়।
Comments are closed.