খড়গপুর আইআইটিতে মুখ বন্ধের ফরমান ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক। গত শুক্রবার আইআইটি খড়গপুরের রেজিস্ট্রার বি এন সিংহ একটি নির্দেশিকা জারি করেন। তাতে শিক্ষকদের এমন কোনও মন্তব্য বা সমালোচনা করতে নিষেধ করা হয়, যাতে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
গত শুক্রবার জারি করা নোটিসে খড়গপুর আইআইটির শিক্ষকদের কোনও রেডিও প্রোগ্রামে অংশ নিতে যেমন বারণ করা হয়েছে, তেমনই কোনও সংবাদপত্রে প্রবন্ধ ছাপার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। দেশের প্রাচীনতম তথা অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ফরমান জারি করা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আইআইটি খড়গপুরের রেজিস্ট্রারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্মীকে সার্ভিস রুল সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করার জন্যই এমন নির্দেশিকা। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষকই এখানে নতুন যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হয়ত সার্ভিস রুলের বিষয়ে অবহিত নন।
যদিও এমন নির্দেশের বিরোধিতায় সরব হওয়া ব্যক্তিরা নেপথ্যে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। নির্দেশিকাকে তুলে ধরে তাঁরা দেখাচ্ছেন বেশ কিছু শব্দ। নোটিসে বলা হয়েছে, এটা দেখা গিয়েছে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাঁদের মতামত কিংবা লিখিত প্রবন্ধ সংবাদমাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিচ্ছেন। দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কর্তৃপক্ষের এই নোটিস নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন আইআইটি খড়গপুরের কর্মীরা।
খড়গপুর আইআইটির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক সব্যসাচী সেনগুপ্ত বলছেন, যদি কর্মীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়, তাহলে নেপথ্যে যে রাজনীতি রয়েছে তা পরিষ্কার। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর ভি কে তিওয়ারি কীভাবে ফেসবুকে এবিভিপির বাংলা শাখার অনুষ্ঠানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেন?
সমাজকর্মী রাহুল ব্যানার্জি বলছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোনও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গর্বের বিষয়। কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষক ও পড়ুয়ারা যাতে নির্ভয়ে মত প্রকাশ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, পড়ুয়া-শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করতেই ব্যস্ত কর্তৃপক্ষ। ভয়টা কীসের?
তবে খড়গপুরই প্রথম নয়। এর আগে গত এপ্রিলে কার্যত একইরকম ফরমান জারি করে পড়ুয়াদের মুখবন্ধ করেছিল শিবপুর বিই (IIEST) কলেজ। অভিযোগ, পড়ুয়াদের একাংশকে সমসাময়িক ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা থেকে আটকাতেই এমন নির্দেশিকা জারি করেছিল কর্তৃপক্ষ।
আইআইটি খড়গপুরের কয়েকজন পড়ুয়া ও গবেষক সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর প্রদীপ জ্বালাও কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন। সূত্রের খবর, এতেই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হানি হয়েছে বলে মনে করছে খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ। তারপরই আসে ফরমান।
Comments are closed.