বড় হয়ে উঠছিলেন খুব স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু ১১ বছর বয়সেই বুঝতে পারেন আর পাঁচটা ছেলের থেকে তিনি আলাদা। প্রথমে ভয়ে কাউকে কিছু বলতে না পারলেও পরে মিশে যান নিজের কমিউনিটির মানুষদের সঙ্গে। শুরু হয় সংগ্রাম। ট্রেনের ভিক্ষুক থেকে ফটো জার্নালিস্ট হয়ে ওঠার পথটা সহজ নয়। কিন্তু হার মানেনই জোয়া থমাস লোবো। মুম্বাইয়ের জোয়াই দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার ফটো জার্নালিস্ট।
কেমন ছিল জোয়ার চিত্র সাংবাদিক হয়ে ওঠার কাহিনী?
মুম্বাইয়ের মাহিমের কাপরা বাজারে বড় হয়ে ওঠা জোয়ার। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছেন কনভেন্ট স্কুলে। মিশনারি পরিবেশে বেড়ে ওঠা, তাই ঝরঝরে ইংরেজি বলতে আটকায় না।
১৭ বছরে সালমা নামে একজনের কাছে ট্রান্সজেন্ডারের স্বীকৃতি পান। পরবর্তীকালে সালমাকে নিজের আরেক ‘মা’ হিসেবে মনে করতেন তিনি। সালমাই তাঁর নাম দেন ‘জোয়া’। শুরু হয় সংগ্রাম। মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় ভিক্ষা করে দিন চালানো শুরু। একটা সময় দিনে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন করতেন। কোনও উৎসবের সময় সেই অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়াত ১৫০০ টাকায়। কিন্তু পুলিশের খপ্পরে পড়লেই মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতেই হত।
বান্দ্রার লাল মিট্টি এলাকার বাসিন্দা জোয়া ২০১৬ সালে মাকে হারান। এরপর ২০১৮ সালেই তাঁর জীবন নতুন মোড় নেয়। এর পরের কাহিনী অনেকটা সিনেমার মতো। ইউটিউবে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে ‘হিজড়া শাপ কি বর্ধন’ নামে একটি সিরিজের প্ৰথম পার্ট দেখে কমেন্টে কিছু মন্তব্য করেন জোয়া। যেটা তাঁকে ওই সিরিজের দ্বিতীয় পার্টে অভিনয় করার সুযোগ দেয়। আর জীবনে প্রথমবার অভিনয় করে অ্যাওয়ার্ডও পান তিনি। পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে তাঁর ভাষণ শুনে স্থানীয় একটি নিউজ এজেন্সি তাঁকে রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ করে।
হাতে প্রেস কার্ড পাওয়ার পরেও জোয়া নিজে ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি, কী কাজ করতে হবে তাঁকে। ট্রেনে ভিক্ষা করা আর কিছুই যে পারেন না! সেই সময় জোয়ার চোখ টানে ক্যামেরার জগত। ছবির দুনিয়া। নিজের স্টোরিকে ভিন্ন আঙ্গিক দিতে জোয়ার কলমের সঙ্গী হয় ক্যামেরার লেন্স। ভিক্ষার জমানো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটা পুরোনো ক্যামেরা কেনেন তিনি।
২০১৯ সালে সেই ক্যামেরায় তিনি ট্রান্সজেন্ডারদের সমান অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভের কভারেজ করেন। সেই সময় জোয়া থমাস নজরে পড়ে যান দিব্যকান্ত সোলাঙ্কি নামে একজন সিনিয়র চিত্র সাংবাদিকের। সাংবাদিকতার পেশায় জোয়াকে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন তিনি।
২০২০ সালে লকডাউনে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা স্টেশনে জোয়ার তোলা একটি ছবি জনপ্রিয় হয়। অতিমারির জেরে লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন স্টেশনে। সেই ছবি ক্যামেরাবন্দী করেন জোয়া। তা এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, তাঁর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে ইনস্টাগ্রামে জোয়ার ফ্যান ফলোয়ার হাজারের বেশি।
Comments are closed.