মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের অন্যতম সেনাকর্তা কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি প্রায় তৈরি হয়ে গেল (Iran US Conflict)। বলা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই সোলেমানিকে খুন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে দুটি গাড়িতে ড্রোন হামলার পরেই ট্রাম্প আমেরিকার জাতীয় পতাকার ছবি ট্যুইট করেন। তখনও জানা যায়নি, ওই গাড়ি দুটিতে কারা ছিলেন। পরে জানা যায়, গাড়িতে ছিলেন, ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের মেজর জেনারেল, কাডস বাহিনীর প্রধান সোলেমানি। ইরানের মদতপুষ্ট ইরাকের ভাড়াটে সেনাবাহিনীর নেতা আবু মাহদি আল মুহান্দিসও ছিলেন অন্য গাড়িটিতে। তিনিও নিহত হন। ঘটনার পরেই মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এস্পার এক বিবৃতিতে বলেন, ইরান ও তার আশপাশে থাকা মার্কিন নাগরিক, সেনা ও সম্পত্তির উপর লাগাতার হামলা বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ দরকার ছিল।শুক্রবার সকালে ট্রাম্প ট্যুইট করে জানান, আরও অনেক আগেই সোলেমানিকে খতম করা উচিত ছিল। পেন্টাগন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশেই জঙ্গি সোলেমানিকে হত্যা করা হয়েছে (Iran US Conflict)।
এই ঘটনার পরে গোটা পশ্চিম এশিয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বহু দেশে আমেরিকা বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন ইরানের ধর্মগুরু আলি খোমেইনি। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেন, আমেরিকা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এর ফল ভুগতে হবে ওদের।
গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল। আবার ১৯৯০-৯১ সালের মতো যুদ্ধ হবে কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। উদ্বিগ্ন ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। সারা পশ্চিম এশিয়ায় প্রায় এক কোটি ভারতীয়র বাস। যুদ্ধ হলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। যদি সত্যিই যুদ্ধ লাগে, তা হলে ভারত কার পক্ষ নেবে, আমেরিকা না ইরান, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি পাকা করার জন্য এক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মোদী সরকার। আবার ইরানের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক এখন বেশ ভালো। চাবাহার বন্দর ব্যবহারের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া উপসাগরীয় এলাকা থেকে ভারতে বছরে প্রায় চার হাজার কোটি ডলার বিদেশি মুদ্রা আসে। আমেরিকার চাপে ভারত ইরান থেকে তেল আমদানি কমিয়েছে বটে। কিন্তু হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে তেল তোলা চলছে। বড় ধরনের গোলমাল হলে এই প্রণালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তার প্রভাব পড়বে তেল উত্তোলনের ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে আমেরিকার ড্রোন হানায় সোলেমানির মৃত্যুর পরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে গিয়েছে প্রায় এক শতাংশ। শুক্রবার কলকাতায় ২৪ ক্যারেট পাকা সোনার দাম ছিল ৪০ হাজার ৫১০ টাকা। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ জিএসটি ধরলে দাম আরও বাড়বে। এমনিতেই বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা চলছে। তার উপর আমেরিকার এই দাদাগিরির জন্য আরও কত খেসারত দিতে হবে আমজনতাকে, তারই অপেক্ষায় রয়েছে গোটা পৃথিবী।
Comments are closed.