৩১ অগাস্ট, ২০১৯। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। আধ দশকের বেশি সময় ধরে, ১৫০০ কোটির বেশি খরচ করে, একাধিক মৃত্যু এবং সর্বব্যাপী আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হল অসমের নাগরিক পঞ্জি। দেখা গেল মোট ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। বিজেপি শাসিত অসমে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষের মধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখে ক্ষমতাসীন বিজেপি। নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রের মোদী-শাহের সরকার। চাপ বাড়ায় আরএসএস। ভ্রান্তির অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় একাধিক সংগঠন। অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি পথে নেমে বিরোধিতা শুরু করে অসম বিজেপিও। শেষপর্যন্ত দিন দুয়েক আগে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেন, গোটা দেশের সঙ্গে অসমে নতুন করে এনআরসি হবে। সেই সুর ধরেই অসমের শীর্ষ বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়ে দেন, ভিত্তি বর্ষ হিসেবে জাতীয় নিয়মই যেন মানা হয় অসমেও।
এই অবস্থায় কেন্দ্র যখন অসমে নতুন করে এনআরসি করার কথা ভাবছে, তখনই ট্যুইটারে বিস্ফোরণ ঘটালেন পদত্যাগী আইএএস অফিসার কান্নন গোপীনাথন। ট্যুইটে নতুন করে অসমে এনআরসি করার ঘোষণাকে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নাম করে। ক’দিন আগে কলকাতায় এসেও এনআরসি প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছিলেন পদত্যাগী আইএএস গোপীনাথন। কড়া সমালোচনা করেছিলেন কেন্দ্রের মোদী-শাহ সরকারের।
শুক্রবার দুপুরে পদত্যাগী আইএএস অফিসার ট্যুইটে লেখেন, তাহলে অমিত শাহ বললেন, অসম এনআরসিকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে গোটা দেশের সঙ্গে সঙ্গে অসমেও ফের নতুন করে এনআরসি হবে। তারমানে অসমে কোনও এনআরসি হয়নি। এবার প্রশ্ন হল, অসম এনআরসির জন্য খরচ হওয়া ১৫০০ কোটি টাকা দেবে কে? এটাতো সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে চলা একটি প্রক্রিয়া। তাহলে কি আমরা সেটা গগৈয়ের পেনশন থেকে কেটে নেব?
অসম এনআরসি নিয়ে ট্যুইট করতে গিয়ে পদত্যাগী আইএএস অফিসার কান্নন গোপীনাথন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নাম টানলেন কেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, রঞ্জন গগৈ প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অসম এনআরসি প্রক্রিয়ায় নজরদারি শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন একাধিকবার প্রকাশ্যে এনআরসি প্রক্রিয়াকে সমর্থনও জানিয়েছেন আদতে অসমের ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা রঞ্জন গগৈ। তাই নতুন করে এনআরসি করার অমিত শাহের ঘোষণাকে কটাক্ষ করতে গিয়ে কৌশলে রঞ্জন গগৈয়ের নাম টেনে এনেছেন কান্নন গোপীনাথন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হওয়া অসম এনআরসি বাতিল করে, কীভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা নতুন করে করবেন, তাঁর সেই আইনি এক্তিয়ার রয়েছে কি? সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ৩৭০ প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরি মানুষদের মত প্রকাশের অধিকারের দাবিতে আইএএস ছেড়ে দেওয়া কান্নন গোপীনাথন।
Comments are closed.