জম্মু-কাশ্মীরঃ ২০১৮ তে হিংসার ঘটনা ৫৮৭, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ। সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ২০১৬ র তুলনায় বেড়েছে ১৬৭ %

কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় সেনা ও উগ্রপন্থীদের সংঘর্ষের মাঝে সেনা-গুলিতে সম্প্রতি মৃত্যু হয় ৭ জন সাধারণ মানুষের। মারা যান ১ সেনা জওয়ান, মৃত্যু হয় ৩ জঙ্গিরও। যার জেরে উপত্যকার পরিস্থিতি এখনও থমথমে। বিশেষ করে ১৪ এবং ১৭ বছর বয়সী ছাত্রসহ ৭ সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এরই মধ্যে, জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের (এমএইচএ) পক্ষ থেকে রাজ্যসভায় পেশ করা এই রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরে (২০১৮ সালের ২ রা ডিসেম্বর পর্যন্ত) বিভিন্ন হিংসার ঘটনা এবং সংঘর্ষে ৪৭ জন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরে। মৃত্যু হয়েছে ২৪৫ জন জঙ্গি এবং ৯০ জন নিরাপত্তা রক্ষীর। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে উপত্যকায়। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭-১৮ তে জম্মু-কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৬৭ শতাংশ। এই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে এবছর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৮২৬ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন ১১৯ জন সাধারণ নাগরিক এবং ৩৩৪ জন নিরাপত্তা রক্ষী।
এবছর ২ রা ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৮৭ টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে উপত্যকায়, যা নজিরবিহীন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৩৪২ টি এবং ২০১৬ তে ৩২২টি হিংসার ঘটনা ঘটে।
স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক এই হিংসার কারণ পাকিস্তানের কূটনীতি, যা উপত্যকার মানুষকে সরকার সম্পর্কে ভুল বোঝাচ্ছে। দায়ী করা হয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে। রিপোর্টে হিংসার কারণ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ারও ভূমিকা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে উপত্যকায় ৩৬ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কে বা কারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। চলতি বছরের জুন মাসে ‘রাইজিং কাশ্মীর’-এর সম্পাদক ও সাংবাদিক সুজাত বুখারিকে গুলি করে হত্যা করে আততায়ীরা। পুলিশ এই মৃত্যুর পেছনে লস্কর-ই-তৈবাকে দায়ী করেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে উপত্যকায় হিংসার ঘটনা ক্রমশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এক সেনা অফিসার।
নিরাপত্তা বাহিনীগুলিও পক্ষান্তরে স্বীকার করেছে, এবছরই সবচেয়ে বেশি সেনা, আধা সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের মৃত্যু হয়েছে উপত্যকায়। বারবার উপত্যকার নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে কোনও রকম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের প্রলোভনে যেন তাঁরা পা না দেন। সেনা প্রদত্ত ‘নো গো জোন’ এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তারপরেও এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, জম্মু-কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতির পিডিপি ও বিজেপি জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকে চালু হয় রাজ্যপাল শাসন। যদিও এখন জম্মু-কাশ্মীরে চলছে রাষ্ট্রপতি শাসন। মেহেবুবা মুফতি থেকে ওমর আবাদুল্লা, অধিকাংশ বিরোধী দলই উপত্যকায় ক্রমান্বয়ে ঘটে চলা অশান্তির ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রাসী নীতিকেই দায়ী করেছেন। পাশাপাশি, সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অশান্তি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু বারবার কেন্দ্রের আশ্বাস সত্ত্বেও হিংসার ঘটনা বেড়েই চলেছে উপত্যকায়।

Comments are closed.