কেরলের বিষ্ণু মাধব, যাঁর আঁকা কার্টুন নিয়ে তোলপাড় দেশের রাজনীতি, শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনীতে মজে সোশ্যাল মিডিয়া
বিষ্ণু মাধব। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী কেরলের এই কার্টুনিস্ট সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন বিখ্যাত। কেরলের সাবরীমালা মন্দির থেকে বন্যা, রাজনীতি থেকে সিনেমা, ‘কারপেনসিলাসন’ নামে ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিষ্ণু মাধবের স্যাটায়ারধর্মী কার্টুনে লাইক পড়ে লাখ লাখ, হাজার হাজার শেয়ার হয়। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে নিয়ে বিষ্ণুর কার্টুনে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। লাগাতার হুমকির মুখে পড়ছেন শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী।
কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিরোধী নেতাদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের গেরুয়া শিবিরে টানার অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। এই প্রেক্ষিতে বিষ্ণু মাধবের কার্টুন যেন আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে। কর্ণাটকের কংগ্রেস-জেডিএস সরকার পড়ে যাওয়ার পর একটি কার্টুন আঁকেন তিনি।
ছবিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বসে আছেন। তাঁর সামনে টেবিলের একপ্রান্তে রাখা হ্যান্ডকাফ আর অন্যপ্রান্তে রাখা পদ্মফুল। ওপরে লেখা, ‘এমন একটি প্রস্তাব যা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না’। এরপরেই প্রবল আক্রমণের মুখে পড়েন কার্টুনিস্ট বিষ্ণু মাধব।
তবে এই প্রথমবার নয়, ধর্ম, রাজনীতি, সমাজের অন্ধকার দিক নিয়ে বিষ্ণু মাধবের কার্টুন আগেও উত্তাপ ছড়িয়েছে, তাঁকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো হুমকিও এসেছে। তবুও শিল্পকর্মে নিজের ভাবনা-চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে কাউকে পরোয়া করেননি বিষ্ণু মাধব। তাঁর কথায় সমাজের আয়না হল তাঁর কার্টুন। কোনও স্বপ্ন দৃশ্য তিনি রচনা করেন না। বাস্তব নিয়েই তাঁর কাজ।
ছোট থেকেই কোনও একটি বিষয় তাঁকে ভাবালে তা নিয়ে চটজলদি কাগজ, পেনসিল নিয়ে বসে পড়তেন বিষ্ণু মাধব। কেরলের কান্নুরের এই ছেলেটির ওপর কার্টুনের নেশা এতটাই জাঁকিয়ে বসে, ছাত্রাবস্থা থেকেই খবর-কাগজ, নিউজ চ্যানেলগুলিতে কড়া নজর থাকত তাঁর। যে বিষয়টি তাঁকে ভাবাত, চটজলদি তা নিয়ে কার্টুন তৈরি হত। সেসময় অবশ্য বাবা-মা ছাড়া সেই শিল্পকর্মকে বাহবা দেওয়ার আর কেউ ছিল না। তাই স্কুলে পড়ার সময় নিজেই একটি খবরের কাগজ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। ‘মালায়ালা শব্দম’ নামে সেই সংবাদপত্রের চিফ এডিটর ছিলেন বিষ্ণু নিজেই। সেখানেই ছাপা হতে লাগল তাঁর কার্টুন। পরিচিতি মেলে, খানিকটা হলেও স্বপ্ন পূরণ হয়। স্কুল জীবন শেষ করে শান্তিনিকেতনে পাড়ি দেন কেরলের বিষ্ণু মাধব। ফাইন আর্টস নিয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকেই বিএফএ পাশ করেন। ছোট থেকে সংবাদমাধ্যমের কাজে যুক্ত হতে চাইলেও, পরে সে পরিকল্পনা ছেড়ে ইলাস্ট্রেশান, ক্যারিকেচারের কাজ শুরু করেন। আর সোশ্যাল মিডিয়ার কার্টুন প্রকাশের মাধ্যমে নিজের ভাবনা-চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করতে শুরু করেন বিষ্ণু মাধব। এরপর কখনও সাবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকারকে সমর্থন, কখনও কেরলের বন্যা পরিস্থিতি বা কর্ণাটকের জোট সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে মজার অথচ গভীর ভাবনার কার্টুন এঁকে কার্টুনিস্ট বিষ্ণু মাধব সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রবল জনপ্রিয়। সেই সঙ্গেই একাধিকবার পেয়েছেন হুমকি। তাঁর কথায়, কারোর বিশ্বাস বা ভাবনা-চিন্তার সঙ্গে না মিললে বিতর্ক হতেই পারে, কিন্তু কার্টুনের জন্য ব্যক্তিগত স্তরে কুরুচিকর আক্রমণ শুরু হলে তা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেন ‘পেনসিলাসন’ বিষ্ণু মাধব।
Comments are closed.