জন্ম থেকেই দু’হাত নেই কেরলের মালাপ্পুরমের বাসিন্দা দেবীকার। যদিও জীবনে বড় হওয়ার প্রবল ইচ্ছের কাছে সেই প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে। ছোট্ট থেকেই পা’দিয়ে লিখতো মেধাবী দেবীকা। আর এবার কেরলের দশম শ্রেণির এসএসএলসি পরীক্ষায় প্রত্যেক বিষয়ে ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে বছর ষোলোর দেবীকা।
দুটি হাত নেই দেবীকার। তবে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছার কাছে এই বাধা আর কতটুকু! দুই পা দিয়েই চলেছিল বর্ণমালা লেখার পালা। পা দিয়ে দেবীকা লিখে ফেলতে পারে মালায়ালম, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা। এই বছর কেরলের সেকেন্ডারি স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট (এসএসএলসি) পরীক্ষায় বসেছিল দেবীকা। পরীক্ষার উত্তরপত্র তার হয়ে অন্য কাউকে লেখার অনুমতি দেওয়া হলেও, তা নেয়নি সে। পা দিয়ে লিখেই শেষ করেছে পুরো পরীক্ষা।
আর গত ৬ ই মে পরীক্ষার ফল বেরোতে দেখা গেল, সবকটি বিষয়ে ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়েছে ভাল্লিকুন্নন চন্দ্রন ব্রাদার্স উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবীকা। দেবীকার বাবা সঞ্জীব পেশায় পুলিশ অফিসার আর মা সুজাতা গৃহকর্ত্রী। দুজনেই জানাচ্ছেন, তাঁরা কেউই ভাবেননি মেয়ে এতো ভালো রেজাল্ট করবে।
শুধু পড়াশোনাতেই নয়, দারুণ ছবিও আঁকে দেবীকা। বিভিন্ন আর্ট গ্যালারিতে দেবীকার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়। আর নিজের পরীক্ষার ফল নিয়ে নিজেও খুব একটা উচ্ছ্বসিত নয় সে। জানিয়েছে, তাঁর এই রেজাল্টের পেছনে স্কুলের শিক্ষকদের বড় অবদান রয়েছে। ক্লাস এগারো থেকে আর্টস নিয়ে পড়াশুনো এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে দেবীকা। সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়া তাঁর লক্ষ্য।
দেবীকার বাবা যে থানায় কর্মরত সেখান থেকেও তাঁর মেয়েকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ অফিসার বাবা সঞ্জীব সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, পরীক্ষার ফলই সব নয়। সব বিষয়ে ছেলে ‘এ প্লাস’ পায়নি বলে বেলচা দিয়ে ছেলেকে মারধর করে গ্রেফতার হয়েছে বাবা, এমন খবরও আসছে এই রাজ্য থেকে। আর সঞ্জীববাবুর সহকর্মী, দেবীকার শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের কথায়, ইচ্ছাশক্তি আর জেদ থাকলে কোনও বাধাই যে বাধা নয় তা প্রমাণ করেছে জন্ম থেকেই দু’হাত না থাকা মেয়েটা।
Comments are closed.