আপনি কি হিন্দু? ফুকেটে ইয়ট ভাড়া করতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে ভারতীয় শিল্পপতি কিশোর ভি মারিওয়ালা! লিখলেন, ‘আমি লজ্জিত’
ক’দিন আগেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি কার্যত আক্ষেপের সুরে নাৎসি শাসনাধীন জার্মানির পথে নয়া ভারতের যাত্রার কথা মনে করিয়েছিলেন। শুধু নোবেলজয়ী প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীই নন, একই সুর উঠে এসেছে শিবশঙ্কর মেনন, প্রতাপভানু মেহতাদের গলাতেও। তাঁদের দাবি মতো বিভেদ-দীর্ণ ভারতের প্রতিচ্ছবিই কি নিউ ইন্ডিয়ার প্রতিফলন হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেতে চলেছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে দুষ্কৃতী হামলা এবং সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে তোলপাড় ভারতে আচমকাই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, একটি ফেসবুক পোস্ট।
ভারতের অন্যতম বড় ভোগ্যপণ্য নির্মাতা ম্যারিকোর প্রাক্তন বোর্ড সদস্য কিশোর ভি মারিওয়ালা। সম্প্রতি তিনিই ফেসবুকে লিখেছেন তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা। যা তাঁকে যারপরনাই বিস্মিত করেছে। ভারতের অন্যতম বড় উদ্যোগপতি লজ্জায় মাটিতে মিশে গিয়েছেন বিদেশে নিজের দেশের বদলে যাওয়া ভাবমূর্তির সাক্ষী হয়ে। কী লিখেছেন কিশোর ভি মারিওয়ালা?
গত ৫ জানুয়ারি ফেসবুকে নিজের ওয়ালে মারিওয়ালা লিখেছেন, নতুন বছরে প্রমোদ ভ্রমণে গিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের ফুকেটে। প্ল্যান ছিল, সেখানে এক সপ্তাহ ধরে ইয়টে ঘুরে বেড়াবেন সমুদ্র থেকে সাগরে। কিন্তু সেই ইয়ট ভাড়া দেওয়ার অফিসে গিয়েই চরম বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি। সেই ঘটনাই লিখেছেন নিজের ফেসবুক পেজে।
ইয়ট সংস্থার অফিসে ভারতের উদ্যোগপতিকে একজন রিসেপশনিস্ট জিজ্ঞেস করেন, স্যার আপনি ভারত থেকে এসেছেন। আপনি কি হিন্দু? এ আবার কেমন প্রশ্ন, স্বভাবতই হকচকিয়ে যান মারিওয়ালা। উত্তর পেয়ে রিসেপশনিস্ট ফোন করেন তাঁর বসকে। স্থানীয় ভাষায় দু’জনের মধ্যে কথা হয় কিছুক্ষণ। তারপর মারিওয়ালার কাছে আসেন সংস্থার ম্যানেজার। এবং বলেন, ইয়টের চালকরা সবাই বিভিন্ন ট্রিপে বেরিয়ে গিয়েছেন। হাতে আছেন মাত্র একজন। সমস্যা হল তিনি মুসলিম। ম্যানেজার বলেন, আশা করি এতে আপনি কিছু মনে করবেন না।
আরও অবাক হয়ে মারিওয়ালা প্রশ্ন করেন, এটা আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন! আমি কিছু মনে করতে যাবই বা কেন? তারপর কিশোর ভি মারিওয়ালাকে স্যার সম্বোধন করে ম্যানেজার ভদ্রলোক বলেন, আমরা সংবাদপত্রে পড়ছি হিন্দুরা নাকি মুসলিমদের সহ্য করতে পারে না। এটা জানার পর আমরা একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছি।
নিজের পোস্টের শেষে মারিওয়ালা লিখছেন, বিদেশের সাধারণ মানুষের কাছে এই হয়েছে নতুন ভারতের ভাবমূর্তি। ইয়ট সংস্থার ম্যানেজারকে বোঝাই, কাগজে যা পড়েছেন তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংস্কৃতিমনস্ক হিন্দুই একমত নন।
শেষ কয়েক বছরে বিভেদের যে বীজ বোনা হয়েছে ভারতের মাটিতে, বিদেশে অলিগলিতেও কি ছড়িয়ে পড়ছে তার ডালপালা? নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআর, সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ এবং দুষ্কৃতী তাণ্ডবের প্রক্ষিতে কার্যত পথে নেমেছে গোটা ভারত। এক পক্ষে পড়ুয়াদের একাংশ। উল্টোদিকে সরকারপন্থীরা। এই পরিস্থিতিতে বিদেশের মাটিতে একজন ভারতীয়ের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া কি অন্যরকম ইঙ্গিত বহন করছে? বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের দেশের ভবিতব্য কি তবে ফুকেটে ইয়ট ভাড়া করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করা চিত্রের সঙ্গেই মানানসই? উত্তরটা ভবিষ্যতের গর্ভে।
Comments are closed.