কলকাতা কর্পোরেশনে বামেরা ৮০-কংগ্রেস ৬৪ আসনে লড়ার ফর্মুলা নিয়ে জোট আলোচনা শুরু! পুর ভোটে মসৃণ জোট চাইছে আলিমুদ্দিন
সিএএ-বিরোধী যৌথ আন্দোলনে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় ভালো সাড়া মেলায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব খুশি। তাঁরা মনে করছেন, এই আন্দোলনের রেশ ধরে রাখতে পারলে এপ্রিলের পুর ভোটে বাম-কংগ্রেসের জোটবদ্ধ লড়াইয়েও ভালো সাড়া মিলবে। তবে সেই জোট হতে হবে মসৃণ। দুই দলের নেতারাই আর একটি বিষয়ে একমত। সেটা হল, সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে যে ধরনের জোরদার প্রতিবাদ চলছে, পুর ভোটের প্রাক্কালে সেই প্রতিবাদের ভিড়ে যেন স্থানীয় ইস্যুগুলি হারিয়ে না যায়। কলকাতা শহরে এখন পর্যন্ত বামেরা এবং কংগ্রেস যে কয়টি যৌথ কর্মসূচি পালন করেছে, তাতে দুই পক্ষের তরফেই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। নেতারা আশা করছেন, পুর ভোটেও দুই পক্ষই এ রকম স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেবে। বাম এবং কংগ্রেস নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলকাতা কর্পোরেশন-সহ বিভিন্ন জেলায় যে শতাধিক পুরসভায় এপ্রিল মাসে ভোট হতে চলেছে, সেগুলিতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই দিতে পারলে বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার মানুষকে একটা বার্তা দেওয়া যাবে। সিপিএমের এক প্রবীণ নেতা বলেন, বাম-কংগ্রেসের সিএএ-বিরোধী যৌথ আন্দোলনে মানুষের ভিড় দেখে মমতা ব্যানার্জি ভয় পেয়ে গিয়েছেন। তা না হলে দলীয় সভাগুলিতে বাম দল এবং কংগ্রেসকে নিয়ে তৃণমূল নেত্রী এত কথা বলছেন কেন? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, সিপিএম-কংগ্রেস নাকি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। কিন্তু মানুষ বুঝতে পারছে কারা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকৃত লড়াই করছে।
সূত্রের খবর, পুর ভোটে জোট বেঁধে লড়াই করা নিয়ে জেলায় জেলায় বাম এবং কংগ্রেস নেতারা ঘরোয়া স্তরে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। দু’দলের নেতাদের বিশেষ নজর কলকাতা পুরসভার দিকে। সিপিএমের অন্দরের খবর, কলকাতায় বামেরা ৮০ টি আসনে লড়াই করতে চায়। বাকি ৬৪ টি তারা কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। বামেদের ওই ৮০ টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্টভুক্ত দলগুলি ছাড়াও সহযোগী কিছু বাম দলকে কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে রাজি সিপিএম নেতারা। এই দলগুলির মধ্যে রয়েছে পিডিএস, সিপিআইএমএল প্রভৃতি। আর এক বাম দল এসইউসিআই (সি) বামেদের সঙ্গে জোটে থাকবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সিপিএম নেতারা পিডিএস, সিপিআইএমএল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে এসইউসি-র সঙ্গে সিপিএমের এখনও কথা হয়নি। যদিও সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে এসইউসি বামেদের সঙ্গেই থাকছে। বামেরা এ বার কংগ্রেসকে আসন ছাড়ার ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয়। কংগ্রেস যদি ৬৪-র জায়গায় আরও কয়েকটি আসন চায়, তাও ছাড়তে রাজি সিপিএম নেতারা। সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির এক নেতা বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে অনর্থক কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক, সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই, বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেসের জোটটা মসৃণ হোক।
সিপিএম এবং কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, গতবার কলকাতার পুর ভোটে যে দল যে ওয়ার্ডে জিতেছে, এ বারও সেই দল সেই ওয়ার্ডেই দাঁড়াবে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলগুলিও গত ভোটের অবস্থানেই থাকবে। ইতিমধ্যেই বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে। দুই দলের নেতারাই বলেন, প্রার্থী সম্পর্কে কারও কোনও আপত্তি থাকলে সেটাও দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে। দুই দলের শীর্ষ নেতারাই বলেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা এবং গত লোকসভা ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পুর ভোটে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চাই। সেখানে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝিকে এড়িয়ে চলতে হবে।
কলকাতা কর্পোরেশনের গত ভোটে বাম এবং কংগ্রেসের ফল একেবারেই ভালো হয়নি। তা মাথায় রেখেই এ বার প্রার্থী বাছাইয়ের উপর জোর দিতে বলেছেন নেতারা। গত পাঁচ বছরে কলকাতা-সহ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক পালটে গিয়েছে। লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের ভোট শতাংশ তলানিতে চলে গিয়েছে। বিজেপি ১৮ টি আসন দখল করেছে। যদিও সদ্য হয়ে যাওয়া তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনেই তৃণমূল বিপুল ভোটে জিতেছে। বিজেপি দ্বিতীয় এবং বাম-কংগ্রেস জোট খুব বিশ্রী ভাবে তৃতীয় স্থানে ছিল। এ রকম একটা অবস্থায় পুর ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়াই করতে নামছে। প্রশ্ন হল, এই জোট কতটা লড়াই করতে পারবে দুই বড় শক্তির সঙ্গে।
Comments are closed.