কেন দক্ষিণ কলকাতার ৮, ৯, ১০, এই ৩ বরো সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত? আলিপুর, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর সহ গোটা শহরের কোভিড ম্যাপ দেখে নিন এক নজরে
কলকাতায় প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ১৭ মার্চ। কয়েক দিনের মধ্যেই কলকাতা সহ দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। তারপর পেরিয়েছে ১০০ দিনেরও বেশি। এই সময়ের মধ্যে কলকাতা, বাংলা সহ দেশজুড়েই বেড়েছে করোনা সংক্রমণের হার। কিন্তু জানেন কি, কলকাতা শহরের কোন এলাকা জুলাই মাসের শুরুতে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত?
সম্প্রতি কনটেইনমেন্ট জোন এবং আইসোলেশন ইউনিটের সংজ্ঞা ঠিক করেছে নবান্ন। সংক্রমিত ব্যক্তির ঠিকানাকে বলা হচ্ছে আইসোলেশন ইউনিট এবং ওই এলাকায় আর কোনও সংক্রমিতের প্রেক্ষিতে আশেপাশের এলাকাকে বলা হচ্ছে কনটেইনমেন্ট জোন।
রাজ্য সরকার প্রকাশিত ৩০ জুনের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুর এলাকার ১৬ টি বরোতে মোট আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে ১৮৪২ টি।
শহরের মূলত ৩ টি বরো, ৮, ৯ এবং ১০ এ সংক্রমণের হার অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেকটাই বেশি। খুব পিছিয়ে নেই ৩ এবং ৭ নম্বর বরোও।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা শহরে সবচেয়ে বেশি আইসোলেশন ইউনিট আছে ৯ নম্বর বরোতে, মোট ২২১ টি। এই বরোর মধ্যে পড়ে কলকাতার ৭১, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। জায়গার হিসেবে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল থেকে শুরু করে ভবানীপুর, চেতলা, আলিপুর, খিদিরপুর, একবালপুর, মোমিনপুর, তারাতলা এলাকা।
সংক্রমণের দিক থেকে ৯ নম্বর বরোর পরেই আছে পুরসভার ৮ নম্বর বরো। মোট ২১০ টি। এই বরো এলাকায় পড়ছে ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭২, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮ এবং ৯০ নম্বর ওয়ার্ড। অর্থাৎ, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, কালিঘাট, মিন্টো পার্ক, মনোহর পুকুর, লেক মার্কেট, দেশপ্রিয় পার্ক ও হাজরা এলাকা।
আরও জানতে ক্লিক করুন: কলকাতায় পরিবার পিছু জনসংখ্যা এবং সাক্ষরতার সঙ্গে কী সম্পর্ক কোভিডের?
শহরে আইসোলেশন ইউনিটের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ১০ নম্বর বরো, ১৮৫ টি। এই বরোতে রয়েছে ৮১, ৮৯, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯ এবং ১০০ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডগুলোর মধ্যেই পড়ছে যাদবপুর, টালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, নিউ আলিপুর, যোধপুর পার্ক, নেতাজিনগর, রানিকুঠি এলাকা।
৮, ৯ এবং ১০ নম্বর বরো মূলত দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকা। কিন্তু উত্তর কিংবা পূর্ব-মধ্য কলকাতাতেও কনটেইনমেন্ট জোন রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তবে সেখানে আইসোলেশন ইউনিট বা কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৩ নম্বর বরোর কথা। এই বরোটি মোটামোটিভাবে ফুলবাগান, কাদাপাড়া, বেলেঘাটা, উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি, মানিকতলা এলাকা নিয়ে। এখানে মোট ১৭০ টি আইসোলেশন ইউনিট আছে বলে জানাচ্ছে সরকারি তালিকা।
কলকাতায় শুরু থেকেই মূলত সংক্রমণ ছিল তুলনামূলক নিম্ন আয় সম্পন্ন মানুষের বসতি এলাকায়। ৩ মাস পেরিয়ে ৪ মাসের দোরগোড়ায় এসে দেখা যাচ্ছে, সেই চরিত্রের খুব একটা বদল না হলেও, সংক্রমণ এবার তুলনামূলক নিম্ন আয়সম্পন্ন এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পাড়া বলে পরিচিত এলাকাতেও। শহরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত আলিপুর, নিউ আলিপুর, বেলভেডিয়ার রোড, বালিগঞ্জেও আইসোলেশন ইউনিট তৈরি হয়েছে।
আরও জানতে ক্লিক করুন: মে মাসে কেমন ছিল কলকাতার কনটেইনমেন্ট জোনের চিত্র?
তবে কলকাতার মধ্যে সবচেয়ে কম কনটেইনমেন্ট জোন ও আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে ১৫ এবং ১৬ নম্বর বরোতে। এই তালিকায় রয়েছে ১১ নম্বর বরোও। জুনের শেষে প্রকাশিত তালিকায় সবচেয়ে কম আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে ১৫ নম্বর বরোতে, ২৫ টি। এই এলাকায় পড়ছে ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০ ও ১৪১ নম্বর ওয়ার্ড। অর্থাৎ, গার্ডেনরিচ, কারবালা রোড, মেটিয়াব্রুজের কিছু এলাকা।
৩০ জুন প্রকাশ করা কলকাতার সম্পূর্ণ তালিকা দেখুন Kolkata Containment List 30.06.2020
৪ জুলাই, শনিবার সকালে সরকারের তরফে আরও একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় মোট কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা ১৮ এবং আইসোলেশন ইউনিটের সংখ্যা ১৮৭২ টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকাতে ৫০ শতাংশ কনটেইনমেন্ট জোনই আছে ৮ ও ৯ নম্বর বরোতে। তার মধ্যে সর্বাধিক ৮ নম্বর বরোতে।
সর্বশেষ তালিকা দেখুন Kolkata latest List
Comments are closed.