কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটে আসন সমঝোতা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে। সিপিএম সূত্রের খবর, তারা মোটামুটি ৭০ থেকে ৮০ টি আসনে লড়াই করতে চায়। কংগ্রেস ৬০ টি আসনের একটি প্রাথমিক তালিকা দিয়েছে। তার মধ্যে ৪৫ থেকে ৫০ টি পেলেই তারা খুশি বলে খবর। এর পাশাপাশি বামফ্রন্টের অন্য শরিকরাও আছে। এ ছাড়া ফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলিকেও একটি দুটি করে আসন ছাড়তে আপত্তি নেই সিপিএমের। জানা গিয়েছে, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস আলাদা আলাদা নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করবে। তবে দুই দল কলকাতার জন্য একটি ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি (কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম) তৈরি করবে।
মঙ্গলবার কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। ফ্রন্টের এক নেতা বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপিকে রুখতে গেলে আমাদের কারও অনড় (রিজিড) থাকলে চলবে না। দু’পক্ষকেই উদার মনোভাব নিয়ে চলতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেসের পুর নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক শুভঙ্কর সরকার বলেন, বামেদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আরও অনেক দফায় আলোচনা চলবে। আমরা চাই না, সামান্য আসন সমঝোতা নিয়ে মনোমালিন্য হোক।
এক বাম নেতা জানান, গত ভোটে যাদের হাতে যে সব জেতা আসন ছিল, এ বারও তারা সেই আসনেই লড়বে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতবার যে যেখানে দ্বিতীয় ছিল, এ বার সে রকমই অবস্থান থাকবে। তবে দেখতে হবে, এগুলির মধ্যে গত পাঁচ বছরে গুণগত কোনও পার্থক্য ঘটে গিয়েছে কি না। যেমন ধরা যাক, গতবার আমাদের একটি জেতা আসনে এখন আর আমাদের সেই শক্তি নেই। আবার কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে আসন ছাড়াছাড়ি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুভঙ্কর বলেন, আশা করি, কোনও সমস্যা হবে না।
বুধবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, গত লোকসভা ভোট থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। কাজেই আসন ছাড়াছাড়ি নিয়ে বাম এবং কংগ্রেস, কোনও পক্ষই জেদাজেদি করবে না এবার। এ ব্যাপারে আমরা একমত। একই কথা বলেন সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদারও।
সুত্রের খবর, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের কলকাতা জেলার নেতারা। সোমেন মিত্র বলেন, আমরা ওদের উপর ছেড়ে দিয়েছি। কোনও সমস্যা হলে রাজ্য স্তরের নেতারা হস্তক্ষেপ করবেন। ৮ কিংবা ১০ মার্চ ফের বাম-কংগ্রেস নেতারা বৈঠকে বসছেন। তবে ওই দিনই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে যাবে, এমনটা নয়।
শুধু কলকাতা বা হাওড়া কর্পোরেশন নয়। বাকি যে সব পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা, সেগুলিতেও বামেরা এবং কংগ্রেস জোট করেই লড়াই করবে বলে ঠিক হয়েছে। কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর জানান, প্রতি পুরসভায় ভোটের জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারাই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করবে।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরেই সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা পুরভোটে জোট বা আসন সমঝোতা করে লড়াই করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। জোট করে তাঁরা কলকাতা কিংবা হাওড়া পুরসভা দখল করে ফেলবেন, এমন দুরাশা দুই দলের নেতারা করছেন না। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে তাদের ভোট যে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তার কিছুটা অন্তত যাতে ফিরিয়ে আনা যায়, তারই চেষ্টা করছেন সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা। সিপিএমের এক রাজ্য নেতা বলেন, এই পুরভোটে বাম-কংগ্রেস একত্রে লড়াই করে ভোট একটু বাড়াতে পারলে নিচুতলার কর্মীদের মনোবল বাড়বে। সেটা আগামী বিধানসভা ভোটে কাজে লাগবে। সোমেন মিত্র তো অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেস এবং বামেরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়বে। সিপিএমের যে তাতে আপত্তি নেই, তা জানিয়ে দিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এই নিয়ে আর জল ঘোলা করতে চান না।
Comments are closed.