দুর্গা পূজার পরই এবার আসতে চলেছে কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই আলোর রোশনাই, বাজি। যদিও শব্দ বাজি ফাটানো এখন একেবারেই নিষিদ্ধ তাও বাজির কথা মাথায় এলেই মাথায় আসে একটা নাম। বুড়িমা বাজি। ছোট থেকে বড় সকলেই এই বাজি ফাটাতে পছন্দ করেন। কিন্তু কেন এই বাজির নাম বুড়িমা? তা কি ভেবেছেন কখনো? আসুন জেনে নেওয়া যাক বুড়িমা বাজির আসল রহস্য।
তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে দেখা গেছে, এই বুড়িমার আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। এনার জন্ম ফরিদপুরে। দেশভাগ যখন হয় তখন তার জায়গা হয়েছিল ধল দিঘি সরকারি ক্যাম্পে। এই বোমা শুধু মাত্র একটি চকোলেট বোমা নয়, একটি মেয়ের কষ্টের কাহিনী।
১৯৪৮ সালে যখন দাঙ্গা বিধ্বস্ত অন্নপূর্ণা দেবী পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই শহরে চলে আসেন তার তিন সন্তানকে নিয়ে। ওই তিনজনকে রক্ষা করার জন্য ও নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি অক্লান্ত ভাবে পরিশ্রম করে গেছেন। যাবতীয় গ্লানি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে তিনি বিক্রি করেছেন বাজারে কাচা আনাজ। রাতের পর রাত তাকে দেখা গেছে বিড়ি বাঁধতে। নিজের টাকায় তিনি একটি কারখানা গড়ে তোলেন। পরে আস্তে আস্তে তিনি আলতা এবং সিঁদুরের ব্যবসা শুরু করেন।
তবে ততদিনে অন্নপূর্ণা দেবী বেলুড়ে চলে এসেছেন। তার নিজের বাড়ি হয়েছে। মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ই তিনি উপলব্ধি করেন যে অন্যের জিনিস নিজের কারখানায় বেচার থেকে অনেক ভালো নিজেই সেই জিনিস তৈরি করা। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছেলে সুধীর নাথকে নিয়ে তিনি শুরু করেন ব্যবসা। নিজের বাজির ব্র্যান্ডের নাম দিলেন বুড়িমা। তার ছেলে চকলেট বোম বানানোর কৌশল শিখে নিলেন। ব্যাস, আর তো কথাই নেই। তারপর থেকে দীপাবলি হোক বা ভারত পাকিস্থান এর ম্যাচ! সব জায়গা তেই বুড়িমা বাজি ছিল বিখ্যাত।
১৯৯৬ সালে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণ করা হলো সরকারের তরফ থেকে। সেই থেকেই আস্তে আস্তে বুড়িমা বাকির প্রভাব কমতে থাকে। ব্যবসা বসে যায়। কিন্তু ততদিনে বুড়িমা দেহত্যাগ করেছেন। কিন্তু আগের মত বুড়িমা বাজি বানানো না গেলেও আজও আমরা বুড়িমা কে মনে রেখেছি। একজন মহিলা দেশভাগের সময় যেভাবে নিজেকে এবং নিজের পরিবার কে কেবলমাত্র বুদ্ধির জোরে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, তা আজও প্রতিটি মেয়ের কাছে আদর্শ।
Comments are closed.