সত্যিই কি রয়েছে এলিয়েনদের অস্তিত্ব, এর উত্তর পেতে যুগ যুগ ধরে ভিনগ্রহীদের খোঁজার চেষ্টা করছে মানুষ। দেশ বিদেশের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে ঠাঁই পেয়েছে এলিয়েনদের নানা কথা। তৈরি হয়েছে ঝকঝকে সিনেমা। সেই দীর্ঘ রহস্যভেদ করতে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন বিজ্ঞানীরা। শুক্র গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা।
মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজতে বারবার মঙ্গলগ্রহে অভিযান করেছে মানুষ। কিন্তু এলিয়েনদের হয়ত খোঁজ মিলতে পারে পৃথিবীর সব থেকে কাছের গ্রহ শুক্রে!
শুক্র গ্রহে প্রাণের সন্ধান (Life on Venus Planet)
সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ ভেনাস বা শুক্র। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুক্র গ্রহে তারা অতি অম্লীয় মেঘের সন্ধান পেয়েছেন। এই মেঘটিতে আছে ফসফিন নামে একটি গ্যাস। যা দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন শুক্রে অনুজীব আছে, এটি একটি ‘বায়ো-সিগনেচার’। যা জীবের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ফসফিন হল একটি ফসফরাস পরমাণু ও তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। পৃথিবীতে ফসফিন হচ্ছে জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গ্যাস। পৃথিবীতে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে ফসফরাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের মিলন ঘটিয়ে এই গ্যাস তৈরি করে।
যেমন এই গ্যাস পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীর অন্ত্রে থাকা জীবাণুর আশেপাশে থাকে। অথবা অক্সিজেন কম রয়েছে, এমন জলাভূমিতেও পাওয়া যায় ফসফিন। শিল্প কারখানায় এটি তৈরি করা যায়।
গবেষণা (Could Venus Support Life?)
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেন গ্রিভসের নেতৃত্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল শুক্রের উপর ফসফিন নামে পরিচিত গ্যাসের সন্ধান পেয়েছেন। যা নিয়ে তীব্র কৌতূহল শুরু হয়েছে সারা বিশ্বে। গবেষণাপত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, ফটো-কেমিস্ট্রি বা জিও-কেমেস্ট্রির অজানা উৎস থেকে এই ফসফিন উদ্ভুত হতে পারে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার অ্যাস্ট্রনমি পত্রিকায়। ২০১৭ সালে প্রফেসর গ্রিভস প্রথম শুক্র গ্রহে ফসফিনের উপস্থিতির প্রমাণ পান জেমস ক্লার্ক মাক্সওয়েল টেলিস্কোপের সাহায্যে। মহাকাশের এই সুলুকসন্ধান পরে আরও এগিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি চিলির অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (এএলএমএ) রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে শুক্র পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হন।
নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত নিবন্ধে নিজের পর্যবেক্ষণের ফলাফল নিয়ে প্রফেসর জেন গ্রিভস লিখেছেন, ‘আমি ভীষণ রকম বিস্মিত। শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আমরা এই মুহূর্তে যা জানি এবং ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্বের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা যা হতে পারে, তা হচ্ছে সম্ভবত সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। আমি এই বিষয়টির ওপর আরও গুরুত্ব দিতে চাই। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণেই, যদি এটা ফসফিন হয়, তবে সেখানে প্রাণ আছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমরা একা নই। আর তা যদি হয়, তবে শুধু শুক্র গ্রহে নয়, এই সৌরমণ্ডলে আরও অনেক প্রাণ রয়েছে।
তাহলে শুক্রে কি প্রাণের অস্তিত্ব? (Could There Be Life on Venus?)
ফসফিন হল ফসফরাস ও হাইড্রোজেন মিলে গঠিত একটি রাসায়নিক যৌগ। পৃথিবীতে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে ফসফরাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের মিলন ঘটিয়ে এই গ্যাস তৈরি করে। পৃথিবীতে রসায়নাগারে কিংবা কারখানায় ফসফিন গ্যাস তৈরি করা যায় বটে, কিন্তু শুক্রে তো কোনও কারখানা নেই। তাহলে শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠের ৫০ কিলোমিটার উপরে মেঘরাশির মধ্যে এই ফসফিন কেমন করে আসছে, সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। সেখান থেকেই উদ্রেক হচ্ছে শুক্রে প্রাণের অস্তিত্বের কথা। শুক্র পৃথিবীর চেয়ে সূর্যের অনেক কাছে বলে সেখানকার তাপমাত্রা অনেক বেশি।
শুক্র পৃষ্ঠেই ৪৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কোনও জীবের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখেন না বিজ্ঞানীরা। আবার শুক্রের মেঘে ফসফিন গ্যাস কোনও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত কিংবা অন্য কোনো ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাই কোনও জীবকে এর কারণ ধরেই এখন গবেষণা চলছে।
এদিকে নাসার গবেষকদের মতে, ২০০ কোটি বছর আগে শুক্রে তরলের সমুদ্র ছিল। তার পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও প্রাণ ধারণের উপযোগী ছিল। কয়েক বছর আগে নাসার গোডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের গবেষকেরা একটি কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে শুক্রের অতীত আবহাওয়া মণ্ডলের চিত্র তৈরি করেন। সেই গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হয় ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার’ পত্রিকায়।
প্রফেসর গ্রিভসের গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) পদার্থবিদ কার্লা সোসা-সিলভার মত, শুক্র এখন হয়ত বাসযোগ্য নয়, তবে অনেক অনেককাল আগে হয়ত এর পৃষ্ঠে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। হয়ত গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া এই গ্রহকে অবাসযোগ্য করে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, ফসফিনের অস্তিত্ব মেলা মানে বড় ব্যাপার। শুক্রে এর উপস্থিতি পাওয়া যাওয়া মানে এটা ধরে নেওয়াই যায় যে, শুক্রেও প্রাণের অস্তিত্ব আছে।
Comments are closed.