Lockdown: করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর ফেক নিউজ ঘুরে বেড়াচ্ছে, ক্রস-চেক করে একটা খবরকে বিশ্বাস করুন
সারা বিশ্ব এক খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে এমন কোনও ঘটনার কথা মনে পড়ছে না, যেখানে একটি শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের জন্য বিশ্ববাসীকে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। ভারতও আজ এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তাঁদের সাধ্যমত সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে। দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, ফের বৃদ্ধি করা হয়েছে তার মেয়াদ।
কিন্তু এই লকডাউনের মধ্যেও আমরা এই সরকারি নির্দেশের কিছু অবমাননা লক্ষ্য করছি। একটা কথা সবার মাথায় রাখা দরকার, আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে আমরা অনেকেই নিজের পরিবারে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারি না। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের জন্য উপযুক্ত সময়, নিজেদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ও নিজেদের মধ্যে সেই পুরনো আন্তরিকতা আবার ফিরিয়ে আনার।
আমি যেহেতু একটি কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত, তাই এখন পঠনপাঠন বন্ধ থাকার কারণে হাতে বেশ কিছুটা সময় পাওয়া যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে কলেজের কাজ সহ বেশ কিছু অনলাইন ক্লাস নিতে হচ্ছে প্রতিদিন। এই অনলাইন ক্লাসে আশ্চর্যজনক ভাবে অধিক মাত্রায় ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবং ছাত্র-ছাত্রীরা আরও বেশি করে এই ধরনের ক্লাসের দাবি জানাচ্ছে। এটা খুবই ভাল একটা ট্রেন্ড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে চলা শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে ধীরে ধীরে যদি এই ধরনের অনলাইন ক্লাস আরও জনপ্রিয় হয়, তাহলে খুব একটা অবাক হব না।
আমি সাংবাদিকতার অধ্যাপক। গত ১৫ বছর ধরে পড়াচ্ছি। তার আগে একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানে ছ’বছর চাকরি করেছি। আর এই পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ রাখাটা খুবই জরুরি। এই লকডাউনের দিনগুলিতে গত ২১ বছর ধরে যে সমস্ত মানুষের সংস্পর্শে এসেছি তাঁদের অনেকের সাথেই যোগাযোগ করছি। এবং অনেকের সঙ্গেই অনেক ধরনের গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে, যার মাধ্যমে অনেক সমৃদ্ধ হওয়া যায়।
এই করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ফেক নিউজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাইকে বলব এই ধরনের ফেক নিউজে কান দেবেন না। অনেক রকমভাবে ক্রস-চেক করে তবে একটা খবরকে বিশ্বাস করুন।
এই লকডাউনের ফলে দেশে বিদেশে আমার বহু ছাত্র-ছাত্রী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব আটকে পড়েছেন। তাঁদের সবার সঙ্গেই ইদানিং কথা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে জানতে পারছি এবং সবাইকে যতটা পারছি পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এখন একদিকে যেমন আমি ও আমার স্ত্রী বাড়ির কাজ করছি, তেমনই অন্যদিকে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, শ্যাম বেনেগালের মত পরিচালকের তৈরি বেশ কিছু পুরনো ক্লাসিক সিনেমাও দেখছি। এর মধ্যে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালজমের এর উপর তৈরি হওয়া ‘All the President’s Men’ নামক একটি সিনেমা দেখেছি। এছাড়াও গল্পের বইয়ের মধ্যে বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ কিছু উপন্যাস সহ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি ও পুতুল নাচের ইতিকথাও আবার নতুন করে পড়েছি।
এছাড়াও জ্যোতিষ শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করতে আমার বেশ ভালো লাগে। জানি এই নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক রয়েছে। তবে আমার ক্ষেত্রে চর্চাটা শুধুমাত্র পড়াশোনা পর্যন্তই সীমিত থাকে। আমার স্ত্রী একজন রিসার্চ স্কলার। তিনি ক্লাসিক্যাল গান করেন, তাঁর কিছু গানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করেছি এর মধ্যে। এছাড়াও পুরনো দিনের শিল্পীদের গাওয়া কিছু গান এবং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতার শুনছি। কলেজ থাকলে সকাল ৬ টা থেকে সাড়ে ৬ টার মধ্যে উঠে পড়ি, কিন্তু এখন একটু দেরি করেই উঠছি। তবে অন্য দিকে একটু দেরি করেই ঘুমোতে যাচ্ছি ইদানিং।
এছাড়াও আমার লেখা দুটি বই আছে, যা সারা দেশেই মিডিয়ার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয়। আমি এখন অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই একটা বই লিখছি, সেই বই লেখার কাজটাও বেশ কিছুটা এগিয়ে নিতে যেতে পেরেছি এই লকডাউনের জন্য। এখন দিনে তিন ঘণ্টা মতো লেখার জন্য দিতে পারছি। আশা করছি, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এই বইটির কাজ শেষ করতে পারব।
এই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা পৃথিবীতে সময় খুবই মূল্যবান। এই সময়ে দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে নিজেদের পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলি নিয়ে, ঠিক সেরকমই এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দেশ মেনে সচেতন থাকতে হবে ও খুব পজিটিভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। প্রত্যেক কঠিন সময়ের সঙ্গে অনেক ধরনের সুযোগও আসে আমাদের সামনে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। জীবনের অনেক যুদ্ধই এখনও বাকি, কিন্তু এই মুহূর্তে সবার আগে করোনার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে আমরা সবাই নেমেছি, সেই যুদ্ধে জয়লাভ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
(অনুলিখন: অভিজিৎ দাস)
Comments are closed.