রাজস্থানে প্রকাশ্য ধর্মীয় সম্মেলনে দাঁড়িয়ে ওম বিড়লার ব্রাহ্মণত্বের জয়গান, দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। লোকসভার স্পিকারের পদে থেকে ওম বিড়লা এমন কথা বলতে পারেন কী করে, তা ভেবেই বিচলিত দেশের বিশিষ্টরা। কিন্তু ওম বিড়লা অবিচল। তিনি মাইকে ব্রাহ্মণ সমাজের গুণগান গেয়েই শান্ত হননি, নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভারতের লোকসভার স্পিকার ট্যুইটও করেছেন সভায় বলা বক্তব্যের নির্যাস। রাজস্থানের কোটার অখিল ব্রাহ্মণ মহাসভার সমাবেশে ঠিক কী বলেছিলেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ ওম বিড়লা?
‘ব্রাহ্মণ সমাজ সর্বদা সমাজকে মার্গদর্শন দেওয়ার কাজ করে এসেছে। আজ এই বর্তমান সময়েও একটি গ্রামে একটি ব্রাহ্মণ পরিবার বাস করলে, সেই পরিবার নিজের ত্যাগ ও সেবার কারণে, তাঁর স্থান সর্বদা বাকিদের থেকে উঁচুতে হয়। এজন্যই এই সমাজে জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার সম্মান সমাজের সবচেয়ে উঁচুতে উঠে যায়।’
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ওম বিড়লার বক্তব্য শেষ করাই সমস্যা হয়ে যাচ্ছিল হাততালির তোড়ে। সভাস্থলে হাততালির ঝড় উঠেছে, আর ওদিকে লোকসভার স্পিকারের বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশে। প্রশ্নকর্তাদের কেউ কেউ বিড়লার মন্তব্যের বদলে মানসিকতার দিকে নজর দিতে বলছেন। তাঁদের দাবি, বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রবল সমর্থক এবং প্রত্যক্ষ ধারক-বাহক। ওম বিড়লার মন্তব্যেও এই মানসিকতারই প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা।
পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) এর রাজস্থানের রাজ্য সভানেত্রী কবিতা শ্রীবাস্তব ওম বিড়লার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে তাঁর কাছে মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লোকসভার স্পিকারের এই মন্তব্য সংবিধান বিরুদ্ধ। পিইউসিএল এবিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকেও চিঠি দেবে বলে জানিয়েছেন কবিতা।
ব্রাহ্মণ সমাজের গুণগান করে যে বিতর্কের সূত্রপাত, তা নিয়ে অবশ্য অসুবিধার কিছু দেখছেন না বিজেপির নেতারা। যে কোনও সম্প্রদায় কিংবা সমাজ সম্পর্কে প্রশংসাসূচক কথা বললেই তা ভালো আর ব্রাহ্মণদের নিয়ে কিছু বললেই তা কীভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদ হয়, ট্যুইটারে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। স্পিকারের পদে বসেও একথা বলে কোনও অপরাধ করে ফেলেননি ওম বিড়লা, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনও সওয়াল করছেন অনেকে। তবে দল হিসেবে এখনও বিজেপি এই মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক সমর্থন করেনি।
এই প্রসঙ্গেই কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ওই চেয়ারে বসেই এক সময় লোকসভা সামলাতেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। স্পিকার পদে থাকার সময়ই সিপিএম বহিষ্কার করেছিল তাঁকে। এবার তাঁর ছেড়ে যাওয়া পদে বসছেন ওম বিড়লারা। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে, আক্ষেপের কালো মেঘ সোশ্যাল মিডিয়ার আকাশে।
Comments are closed.