লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের প্রথম ভাষণ নিয়ে আলোচনা, বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নয়া মোড় গোটা ঘটনায়। মহুয়া মৈত্র তাঁর ভাষণ মার্কিন ওয়েবসাইট থেকে টুকেছেন বলে সংবাদ সম্প্রচার করল সর্বভারতীয় হিন্দি চ্যানেল জি নিউজ। আবার তার পালটা মহুয়া মৈত্রের জবাব ট্যুইট করে গোটা ঘটনায় নয়া মাত্রা যোগ করলেন এনডিটিভির এক্সিকিউটিভ এডিটার নিধি রাজদান। যার জেরে তৃণমূল-বিজেপির যুদ্ধ গড়াল কার্যত সংবাদমাধ্যমের লড়াইয়ে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, যে প্রতিবেদনের উল্লেখ করে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন জি নিউজের সুধীর চৌধুরী, তার লেখক মার্টিন লংম্যান স্বয়ং ট্যুইট করে জানিয়ে দিয়েছেন, চুরির অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যে।
কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন মহুয়া মৈত্র। লোকসভায় প্রথম ভাষণেই সারা দেশের নজর কেড়েছেন মহুয়া। তাঁর বাচনভঙ্গি থেকে হোমওয়ার্ক, সবেরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। এই পরিস্থিতিতে মহুয়ার বক্তৃতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিরোনামে এলেন জি নিউজের এক্সিকিউটিভ এডিটর এবং অ্যাঙ্কর সুধীর চৌধুরী। সুধীর চৌধুরী বুধবার একটি ট্যুইট করেন। তাতে তাঁর অভিযোগ, আমেরিকার একটি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে লোকসভায় ভাষণ দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর দাবি, আমেরিকার ওয়েবসাইট ওয়াশিংটন মান্থলি থেকে ভাষণের তথ্য চুরি করেছেন মহুয়া মৈত্র। সুধীর চৌধুরীর আরও দাবি, মার্কিন ওয়েবসাইটটি একথা লিখেছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু মহুয়া মৈত্র সেখানে ট্রাম্পের নাম কেটে মোদীর নাম বসিয়ে, বাকিটা হুবহু টুকে দিয়েছেন।
এই বিষয় নিয়ে যখন জলঘোলা চলছে, ঠিক সেই সময় জি নিউজের এক্সিকিউটিভ এডিটরের ট্যুইটের পাল্টা জবাব দিলেন তৃণমূল সাংসদ। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে মহুয়ার জবাব দিয়ে সেই ট্যুইটটি করলেন ইংরেজি নিউজ চ্যানেল এনডিটিভি-র এক্সিকিউটিভ এডিটর নিধি রাজদান। এই বিষয়ে মহুয়া মৈত্রের বক্তব্য তুলে ধরে বুধবার পরপর দুটি ট্যুইট করেন নিধি রাজদান। সেখানে জানা যায় আরেক তথ্য। তা হল, সুধীর চৌধুরী যে প্রতিবেদন থেকে মহুয়া মৈত্র তথ্য চুরি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন, সেই প্রতিবেদনও মৌলিক কোনও লেখা নয়। বরং সেই প্রতিবেদনের একেবারে শুরুতেই লেখা হয়েছে, আপনি যদি আমেরিকার হলোকাস্ট মিউজিয়ামে যান, তাহলে দেখতে পাবেন একটি ঝোলানো প্ল্যাকার্ডের গায়ে লেখা রয়েছে ফ্যাসিজমের সতর্কবার্তার ১৪ টি ধারা। অথচ সুধীর চৌধুরী সেই প্রতিবেদন পেশ করে দাবি করছেন, মহুয়া মৈত্র এখান থেকেই তথ্য চুরি করে লোকসভায় বলেছেন।
সুধীর চৌধুরীর এই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন মহুয়া মৈত্র। মহুয়া মৈত্রের জবাব নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন নিধি রাজদান।
সেই জবাব হল, ‘চুরি তখনই, যখন কেউ তথ্যের মূল উৎস জানাতে অস্বীকার করে। কিন্তু ভাষণে সমস্ত তথ্যের উৎস সবিস্তারে জানিয়েছি। হলোকাস্ট মিউজিয়ামে ঝোলানো একটি পোস্টার, যার স্রষ্টা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডক্টর লরেন্স ব্রিট ফ্যাসিজমের আগমন বার্তা হিসেবে ১৪ টি পয়েন্ট লিখেছেন। তার মধ্যে ৭ টি পয়েন্ট ভারতের পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেছি তাই সবিস্তারে আলোচনা করেছি। ওয়াশিংটন মান্থলির প্রতিবেদনটিও একই পোস্টার থেকে অনুপ্রাণিত এবং ১৪ টির মধ্যে ১২ টি পয়েন্ট নিয়ে। মূল ইস্যু থেকে নজর ফেরাতে এটা বিজেপির ট্রোল আর্মির আরও একটি প্রয়াস।’
মহুয়া মৈত্রের এই বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে ট্যুইট করেছেন নিধি রাজদান।
তৃণমূল সাংসদের প্রথম ভাষণ নিয়ে এখন কার্যত দ্বিধাবিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়া। কেউ করছেন উচ্চকিত প্রশংসা আবার কেউ অভিযোগ করছেন তথ্য চুরির। এই প্রেক্ষিতে এবার ভার্চুয়াল দুনিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি দুই সাংবাদিকও।
Comments are closed.