দিল্লি হিংসার কলঙ্ক ঢাকতে করোনাভাইরাস আতঙ্কের প্রচার চালানো হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিশানা মুখ্যমন্ত্রীর

দিল্লির হিংসা থেকে নজর ঘোরাতে করোনাভাইরাস নিয়ে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিশানা করে এই মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে কর্মিসভায় তাঁর অভিযোগ, করোনাভাইরাস নিয়ে বেশি মাতামাতি করা হচ্ছে। কোনও কোনও চ্যানেল দিল্লির হিংসা থেকে নজর ঘোরাতেই করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, তা অবশ্যই চিন্তার। কিন্তু দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি করে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য, যাতে দিল্লির হিংসা থেকে নজর ঘোরানো যায়। মমতার কথায়, দিল্লি-হিংসায় যে মানুষগুলো মারা গেলেন, তাঁরা ডেঙ্গু, এনসেফেলাইটিস, সোয়াইন ফ্লু, করোনাভাইরাসে মারা যাননি। মারণ রোগে মৃত্যু হলে তাও সান্ত্বনা থাকত, এমন অসুখে প্রাণ হারিয়েছেন যার প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। কিন্তু যে ভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষগুলোকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে তা লজ্জার। যাঁরা মারা গেলেন তাঁরা হিন্দু না মুসলিম, জনগণ না নাগরিক, বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন মমতার। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের একাংশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা জানান, মঙ্গলবার তাঁর ভাষণকে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে এ দেশের নাগরিক বলেননি। ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর ওপার বাংলার যে মানুষরা এ রাজ্যে চলে আসেন, তাঁদের নাগরিকত্বের কথা বলেছেন। মমতার ঘোষণা, তাঁর সব বক্তব্যই রেকর্ড করা থাকে, বিকৃত করে খবর পরিবেশন করলে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবেন।
এর পর বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, এ রাজ্যে হিংসা ছড়ানোর কথা বলেও ক্ষমা চাইছে না তারা। উপরন্তু গোলি মারো স্লোগান তোলা হচ্ছে। বাংলার সঙ্গে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ বা বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যকে মেলাবেন না। তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশে মহিলদের নির্যাতন করার পরে বিচারের পরিবর্তে নির্যাতিতাকে পুড়িয়ে মারা হয়, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়েছিল বিজেপি সরকার। তারাই আবার বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এদিন দলের কর্মীদের উদ্দেশেও কড়া বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, বিধানসভা ভোট এখনও একবছর দেরি। আমি ভোট প্রচারে আসিনি দক্ষিণ দিনাজপু্রে। বাংলার মা-বোনদের নিরাপত্তা রক্ষায় কর্মীদের পাহারাদার হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, দলের ভিতর যে অন্যায় করবে তাকে তাড়িয়ে দিতে পিছপা হব না। ফের সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে এক পংক্তিতে ফেলে আক্রমণ করে মমতা বলেন, এ রাজ্যে তারা একসঙ্গে কাজ করছে। তাই বিজেপি রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভা আসন নয়, ২০০ টিকে টার্গেট করছে। বাকিগুলি কংগ্রেস ও বিজেপির জন্য ছেড়ে রাখছে তারা। তবে তাঁর টার্গেট শূন্য থেকে ২৯৪ টি আসন, ঘোষণা মমতার। তাঁর কটাক্ষ, যে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা তাঁর সরকারকে আক্রমণ করেন, দিল্লি ‘গণহত্যা’ নিয়ে তারা মুখে কুলুপ এঁটেছে। সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মমতার ঘোষণা, একসঙ্গে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসকে ভোটে পরাজিত করুন।

Comments are closed.