‘এরা আজ বলছে এনআরসি হবে না, কাল করে দেবে’, মতুয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত বনগাঁয় দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এদিনই লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, এখনই দেশজুড়ে এনআরসি চালু করার কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই বনগাঁয় দলের এক সভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, বিজেপিকে কখনও বিশ্বাস করা যায় না। আজ বলছে, এনআরসি হবে না। কিন্তু দেখবেন, কালই হয়ত করে দেবে। এই সভা থেকে ফের মমতার স্পষ্ট ঘোষণা, এনআরসি, এনপিআর ও সিএএ এ রাজ্যে কোনওভাবেই করতে দেব না। কোনও মানুষকে গৃহহীন হতে দেব না। পাশাপাশি, মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁয় দাঁড়িয়ে মমতা এ অভিযোগ করেন, শুধু মুসলিম নয়, সমাজের দরিদ্র হিন্দু, দলিতের উপর অত্যচার করছে বিজেপি। বনগাঁর পর আর এক মতুয়া প্রভাবিত এলাকা রানাঘাটেও মমতা কার্যত একই কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে এই দুই কেন্দ্রেই তৃণমূল পরাজিত হয়েছে। এই দুই কেন্দ্রেই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর বসবাস। মমতা বলেন, আমি রাজ্যের সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে স্বীকৃতি দিয়েছি। এখানকার বাসিন্দারা সকলেই নাগরিক। আজ তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
মঙ্গলবার এনআরসি নিয়ে কেন্দ্র তাদের অবস্থান জানানোর প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেত্রীর এ দিনের ভাষণে ঘুরে-ফিরে আসে এনপিআর, এনআরসি এবং সিএএ। মমতা বলেন, যেখানে কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়ে দেওয়ার নিদান দেন কিংবা সমর্থন করেন, বাংলায় সেই বিজেপি দলের ফাঁদে পা দেবেন না। তাঁর অভিযোগ, দিল্লির শাহিন বাগ থেকে কলকাতার পার্ক সার্কাসে ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। আর তাকেই কুৎসা, অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র করে, গুলি চালিয়ে উচ্ছেদ করতে চাইছে বিজেপি। শুধুমাত্র মিথ্যে বুঝিয়ে এবং টাকা বিলি করে লোকসভা ভোটে এই দুই কেন্দ্র থেকে জিতে গিয়েছে বিজেপি। কিন্তু আজ তিনি ভোটের প্রচারে আসেননি বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বুকের পাটা আছে বলেই রাজ্যে এনপিআর, এনআরসি করতে দিইনি, দেব না। ক্ষমতা থাকলে এই রাজ্যে এনআরসি, এনপিআর কিংবা সিএএ চালু করে দেখাক কেন্দ্র।
এদিন বাম-কংগ্রেস-বিজেপিকে একই পংক্তিতে ফেলে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেন, সিপিএম এবং কংগ্রেস ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। এতে বিজেপির লাভ হচ্ছে। জনতার উদ্দেশে তাঁর বার্তা, কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি কাউকেই বিশ্বাস করবেন না। পাশাপাশি, তাঁর দলের নিচুতলার নেতাদেরও সাবধান করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, কেউ যদি তৃণমূলের ‘লোকাল’ নেতাকে বিশ্বাস করতে না চান, করবেন না। নিচুতলার কর্মীরা দল চালায় না, কারও অভিযোগ থাকলে জানাবেন। ওই নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পিছপা হব না। পাশাপাশি, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের তাঁর বার্তা, মানুষ উত্তেজক কথা বললে সহনশীলতা দিয়ে তা জয় করতে শিখুন।
Comments are closed.