বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোট ঘিরে ধুন্ধুমার, বোমা, গুলি, তৃণমূল-বিজেপি দু’দলেরই বোর্ড দখলের দাবি

বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোটাভুটি ঘিরে ধুন্ধুমার। ভোটাভুটি শেষে তৃণমূল ও বিজেপি দুই পক্ষই আলাদাভাবে দাবি করল, তাদের অধিকারে রয়েছে পুরবোর্ড। তৃণমূলের দাবি, যে ৩ জন বিজেপি কাউন্সিলার অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন তাঁরা কেউই ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করেননি। বনগাঁর পুরপ্রধান শংকর আঢ্য জানান, পুরসভার ২২ আসনের ১১ জন কাউন্সিলারই তৃণমূলের পক্ষে আছেন। অন্যদিকে, বিজেপি কাউন্সিলারদের দাবি, প্রথমে আস্থা ভোটে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয় তাঁদের। পরে তৃণমূল কাউন্সিলারদের অনুপস্থিতে ১১ জন বিজেপি কাউন্সিলার বনগাঁ পুরসভার নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে তাঁদের অনাস্থা জানিয়ে আসেন। সুতরাং,বনগাঁ পুরসভা তাদের দখলে আছে বলে দাবি করে বিজেপি।
এদিকে মঙ্গলবার অনাস্থা ভোট শেষে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় বনগাঁ পুরসভা এলাকায়। ভোটাভুটি শেষে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি। চলে ব্যাপক বোমাবাজি ও ভাঙচুর।
বনগাঁর তৃণমূলের পুরপ্রধান শংকর আঢ্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ও প্রশাসনিক টালবাহানার অভিযোগ এনে কিছুদিন আগে পুরসভার ৩ বিজেপি কাউন্সিলার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। অচলাবস্থা কাটাতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পরে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য। এরপর মঙ্গলবার ছিল বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোট প্রক্রিয়া। এদিন বনগাঁ পুরসভা থেকে ৪০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে মহকুমা প্রশাসন। ভোটাভুটির সময় গণ্ডগোলের আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ পিকেট বসানো হয়, নামানো হয় র‍্যাফ। তা সত্ত্বেও এ দিন বিকেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত, বনগাঁ পুরসভার ২২ টি আসনের মধ্যে ২০ টি আসনই আগে তৃণমূলের দখলে ছিল। ১ টি করে আসন ছিল সিপিএম ও কংগ্রেসের। কিন্তু সম্প্রতি ১১ জন কাউন্সিলার বিজেপিতে রয়েছেন বলে দাবি করে গেরুয়া শিবির। এই অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে আস্থা ভোটের সময় নির্ধারণ করা হলেও সময়মতো শুরু করা যায়নি।
মঙ্গলবার আস্থা ভোটের সময় উত্তর ২৪ পরগনার বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দেবদাস মণ্ডল কেন পুরসভায় উপস্থিত হয়েছেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সমর্থকরা। এছাড়া যে বিজেপির ২ কাউন্সিলার হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্ত্তিক মণ্ডল অপহরণ ও অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত, তাঁদের ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেন তৃণমূল সমর্থকেরা। অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তাদের ২ কাউন্সিলারকে আস্থা ভোটে অংশগ্রহণ নিতে বাধা দেওয়া হয় বলে দাবি করে বিজেপি। এ নিয়ে বনগাঁ স্কুল রোড এলাকায় তীব্র ঝামেলা শুরু হয় দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিজেপির ২ কাউন্সিলার পুরসভার ভেতর ঢোকেন। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, পুরসভার ভেতরে ঢুকলেও তাঁদের কোনও কাউন্সিলারকেই আস্থা ভোটে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি তৃণমূল। তাঁদেরকে পুরসভার একটি ঘরে তালাবন্দি করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। যদিও সাড়ে তিনটে নাগাদ বনগাঁ পুরসভা থেকে বেরিয়ে পুরপ্রধান শংকর আঢ্য জানিয়ে দেন, যে ৩ জন বিজেপি কাউন্সিলার অনাস্থা ভোটের ডাক দিয়েছিলেন, তাঁরা উপস্থিত হননি। তাই নিয়মরক্ষার ভোটাভুটিতে ২২ আসনের ১০ জন কাউন্সিলার তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এবং তাঁরা শংকর আঢ্যকেই ফের পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন বলে জানায় তৃণমূল। কিন্তু পরে বিজেপির ১১ কাউন্সিলার বনগাঁ পুরসভার নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে তাঁদের অনাস্থা জানিয়ে আসেন বলে দাবি করেছেন।

Comments are closed.