করোনা পরিস্থিতি দেখতে রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী, শহরের সব হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিলেন চিকিৎসা ব্যবস্থার, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে থাকার বার্তা
‘তোমরা ভয় পেয়ো না ভাই, অসাধারণ কাজ করছ,’ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে এই ভাবেই প্রশংসা করে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে নার্স ও কর্মীরা কাজ করছেন, তাঁরা কোনওভাবে যেন অসুস্থ না হয়ে পড়েন সেদিকে নজর দিতেই হবে। পাশাপাশি নার্স ও কর্মী যাঁরা করোনা আক্রান্তদের দেখভাল করছেন, তাঁদের আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
করোনাভারাস মোকাবিলা সংক্রান্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের নিজের হাতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার তুলে দিতে মঙ্গলবার বিকেলে আরজি কর, মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার হাসপাতাল, এসএসকেএম, রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল, এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে চষে বেড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। সর্বত্র তিনি সব স্তরের চিকিৎসা কর্মীদের দরাজ প্রশংসা করেন। তাঁদের বলেন, আপনাদের কোনও সমস্যা থাকলে আমাকে জানাবেন। আপনারা নিজেরা সুস্থ থাকবেন। কারণ, আপনাদের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ভালো থাকবেন। তাঁর এই ঝটিকা সফরে স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। গত ক’দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী কার্যত নাওয়া খাওয়া ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবারই লকডাউন ২৭ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ৩১ তারিখ পর্যন্ত করার বার্তা দেন মমতা। কলকাতার বড় সরকারি হাসপাতালগুলি, যার উপর রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, সেগুলি ঘুরে ঘুরে এদিন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজারের বাক্স তুলে দেন হাসপাতালের আধিকারিকদের হাতে। আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার কাজে তাঁদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা মন দিয়ে শোনেন। তারপর, মাস্ক, স্যানিটাইজারের প্রয়োজন আছে শুনে বলেন, আমি কিছু নিয়ে এসেছি। এটা আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে হাসপাতালের পাশে হোটেলে চিকিৎসক ও কর্মীদের থাকার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে সে কথাও জানিয়ে দেন মমতা। এরপর একইভাবে মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শন করেন। মুখে রুমাল জড়িয়ে দূর থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করেন। পরে নীলরতন সরকার হয়ে চলে যান এসএসকেএমে। সেখানে মাস্ক, স্যানিটাইজার তুলে দিয়ে চলে যান রাজারহাট নিউটাউনের চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারে। সেখানেই কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হয়েছে। তিনি জানতে চান, সাতদিন আগে বলা সত্ত্বেও কোয়ারেন্টিনের কাজ পুরোপুরি হয়নি কেন। মঙ্গলবারের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী তা শেষ করতে বলেন। কথায় কথায়, রাজ্যে করোবাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম মৃতের সম্পর্কে স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেন, আমার মনে হয়, হার্টফেল, হাইপারটেনশনের ফলে এই মৃত্যু হল। প্রথম থেকে চিকিৎসা হলে হয়ত তা হত না। তবে অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ভালোভাবে পরিষেবা দেওয়া এবং কাউকে ভয় পেতে বারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
Comments are closed.