মমতা ব্যানার্জি: আক্রান্তের চিকিৎসা করতে দেব না, মৃতদেহ দাহ করতে দেব না, বরদাস্ত নয়! সরকার ঠিক করবে করোনা মোকাবিলার রাস্তা
করোনার চিকিৎসা করা যাবে না, মৃতদেহ দাহ করতে দেওয়া হবে না, এই সমস্ত দাবি দাওয়া চলবে না। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে শুক্রবার জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলা কীভাবে হবে, কোথায় আক্রান্তের চিকিৎসা হবে, তিন-চারজনের কথায় হবে না। সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ এসেছে, কয়েকজন এ ব্যাপারে বাধা দিচ্ছেন, তা বরদাস্ত করা হবে না।
তাঁর সাফ কথা, সরকারের হাতে আইন আছে, জরুরি অবস্থায় যে কোনও বিল্ডিং অধিগ্রহণ করার। কিন্তু সরকার তা করছে না। তাই সরকারের কাজে বাধা নয়।
সম্প্রতি শ্মশানে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ পোড়ানো কিংবা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা করার সময় বেশ কিছু বিক্ষোভের ঘটনা দেখা গিয়েছে। এবার সেই বিক্ষোভকারীদের নরমে গরমে বার্তা দিলেন মমতা। এমআর বাঙুর হাসপাতালের সমস্ত রোগীকে শম্ভুনাথ ও এসএসকেএমে সরানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে মমতার প্রশ্ন, দু-তিনজন সিদ্ধান্ত নেবেন একটি হাসপাতালে কী চিকিৎসা দেওয়া হবে? এমন বিক্ষোভ আন্দোলন যে সরকার এই সময় বরদাস্ত করবে না, তাও কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।
হাসপাতালে মাস্ক, পিপিই না মেলার অভিযোগে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে মমতা ব্যানার্জির প্রশ্ন, চিকিৎসকরা যদি বলেন চিকিৎসা করব না, তাহলে চলবে? যাঁরা সেবা করেন, সেবা করে যাওয়াই তাঁদের কাছে পরম ধর্ম। মমতা ব্যানার্জি বলেন, করোনাকে এত ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এই দেশ অনেক বড় বড় লড়াই দেখেছে, এটাও তেমনই একটা লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কত গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই এবং থার্মাল গান পাঠানো হয়েছে, তারও তালিকা পড়ে শোনান। বলেন, এই জিনিসগুলো দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। তৈরি করতে হয়। অর্ডার দেওয়া আছে, যেমন যেমন সরবরাহ হচ্ছে, তা সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে।
মমতা জানান, রাজ্যে এখন ৩৮ জন করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। তার মধ্যে ৩ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। শুক্রবার আরও ৯ জন ছাড়া পাবেন। রাজ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২,০২৯ জন, হাসপাতাল কোয়ারেন্টিনে ১,৮৯২ জন। গোটা রাজ্যে ২০৬ টি কোয়ারেন্টিন সেন্টার চলছে, মোট ৫৯ টি হাসপাতালে কেবলমাত্র কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেন, কিছু মানুষ এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজনীতি করছেন। তাঁর অভিযোগ, রেশন দোকানের লাইনে গিয়ে তাঁরা বলছেন কেন্দ্রীয় সরকার সব ব্যবস্থা করছে। রাজ্য কিছু করছে না। মমতা ব্যানার্জির আবেদন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়।
লকডাউন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়ে ২১ জানুয়ারি। আর লকডাউন হয়েছে ১৩ মার্চের পর। মাঝের দু’মাস কিছুই করার সুযোগ মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে গোটা ব্যাপার সামলাতে প্রাথমিকভাবে একটু সমস্যা হয়েছিল। মমতার কথায়, বাড়িতে আত্মীয় এলে যেমন বাড়ির মেয়েরা বাড়িতে কিছু না থাকলেও কিছু একটা রান্না করে দেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁকে কার্যত সেই কাজই করতে হয়েছে। তবে পাশাপাশি মমতা জানান, কাজ করতে গেলে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। জীবনে কখনও দুর্যোগ আসবে না, এটা ভাবাটা ভুল। দুর্যোগ আসবে, দুর্যোগটাকে জয় করতে হবে।
Comments are closed.