মাস্ক নাকি ফেস শিল্ড, করোনা মোকাবিলায় কোনটা বেশি কাজের? কী বলছে গবেষণা?

মাস্ক ব্যবহার এখন প্রায় সব দেশেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেকে ফেস শিল্ডও ব্যবহার করছেন। আবার একসঙ্গে দুটোর ব্যবহারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেকে। এতে হয়ত চোখ ও মুখ দুটিই রক্ষা পায়। কিন্তু কোনটি বেশি নিরাপদ? মাস্ক নাকি ফেস শিল্ড?

সম্প্রতি ফিজিক্স অফ ফ্লুইড জার্নালে কয়েকজন বিজ্ঞানীর ফেস শিল্ড নিয়ে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার কথা প্রকাশিত হয়েছে। একটি ম্যানিকুইনের মাথার সঙ্গে একটি ফগ মেশিন সংযুক্ত করে। তারপর কাশির অনুকরণে পাম্পের সাহায্যে বাষ্প দেওয়া হয় ওই ম্যানিকুইনের মুখে। এতে তাঁরা দেখেন, ম্যানিকুইনের উপর রাখা ফেস শিল্ড ড্রপলেট আটকে দিচ্ছে সত্যি, কিন্তু অ্যারোসোলাইজড ড্রপলেট যা নেহাতই ক্ষুদ্র মাপের সেগুলি শিল্ডের নীচ বরাবর ঘোরাফেরা করছে এবং দীর্ঘক্ষণ ভেসেও থাকছে। শুধু তাই নয়, ম্যানিকুইন থেকে অন্তত ৯০ সেন্টিমিটার দূরত্ব পর্যন্ত তারা ছড়িয়ে পড়ছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা হলেও ফেস শিল্ড যে মাস্কের চেয়ে কম সুরক্ষা প্রদান করে তার জন্য আরও পরীক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তাহলে মাস্ক নাকি ফেস শিল্ড?

করোনাভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এখনও পর্যন্ত এর সংক্রমণের ব্যাপারে যেটুকু জানা গিয়েছে, সেটা হল সংক্রমিত মানুষের ক্লোজ কন্টাক্টে (ঘনিষ্ঠ) গেলে তার কাশি, সর্দি বা স্পর্শের মাধ্যমে নির্গত ড্রপলেট অন্য একজনকে সংক্রমিত করতে পারে। মুখ, নাক এবং চোখের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরকে আক্রমণ করতে পারে। তাই বারবার হাত ধোয়ার সঙ্গেই মুখে মাস্ক বা ফেস শিল্ড ব্যবহার করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মাস্কের মাধ্যমে মুখ ও নাক থেকে নির্গত ড্রপলেট সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। একে বলা হয় সোর্স কন্ট্রোল। একই কারণে ফেস শিল্ড ব্যবহার করা হয়। তবে মাস্ক পরলে শুধু মুখের ওই অংশটুকুই ঢাকা থাকে। ফেস শিল্ড পরলে ব্যক্তির চোখও অনেকটা সুরক্ষিত। তাছাড়া মাস্ক পরা অবস্থায় মুখাবয়বে হাতের স্পর্শ লাগতে পারে। অন্যদিকে ফেস শিল্ডে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুখাবয়ব অনেকটাই নিরাপদ থাকে। কারও মাস্ক পরলে হয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। তাই তাঁরা ফেস শিল্ড ব্যবহার করেন। এবার ফেস শিল্ডটি যদি মুখের সঙ্গে আঁটোসাঁটো না হয় সেক্ষেত্রে করোনা মিশ্রিত অ্যারোসল ফেস শিল্ডের তলা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। মাস্ক বা ফেস শিল্ড দুটো ব্যবহারেই কিছু সুবিধা-অসুবিধা আছে। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ঠিকঠাক ব্যবহার জানা এবং ব্যবহার করা। মাস্ক পরে আছি কিন্তু একদিকের নাক দৃশ্যমান তাহলে সেটা কোনও কাজে আসবে না। তেমনই ফেস শিল্ড যদি ঠিকঠাক মুখে না আঁটে সেটা কোনও কাজের নয়।

মাস্ক ব্যবহারের পরেও যাদের বারবার মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য ফেস শিল্ড উপযুক্ত বলে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ফেস শিল্ড যদি ব্যবহার করেন তা যেন কপাল থেকে থুতনির নীচ পর্যন্ত, মুখমণ্ডলকে পুরোপুরি কভার করে। নিজের ফেস শিল্ড অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন না। তবে সব শেষে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মাস্ক ব্যবহারে বেশি জোর দিচ্ছেন। মাস্ক ব্যবহারে অসুবিধে থাকলে তবেই ফেস শিল্ডে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু যাই পরুন, তা ঠিক ভাবে পরা ও তার সঙ্গে হাত ধোওয়া এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

Comments are closed.