বিশাল সৌর কলঙ্কের অভিমুখ ঘুরছে পৃথিবীর দিকে, সৌর ঝলকের জেরে বিপর্যস্ত হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বলছেন বিজ্ঞানীরা

সপ্তাহখানেক আগেই সানস্পট AR2770 কে চিহ্নিত করেছিলেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। আগামী দিনে এই সানস্পট বা সৌর কলঙ্ক আরও বড় আকার নিতে পারে বলে জানাচ্ছে SpaceWeather.com এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট। স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্টিং ওয়েবসাইটের রিপোর্ট বলছে প্রচুর অগ্নিতরঙ্গ সানস্পটের মাধ্যমে নির্গত হচ্ছে। যার অভিমুখ পৃথিবীর দিকে। যা ভূপৃষ্ঠের উপরে থাকা বায়ুমণ্ডলকে বিধ্বস্ত করতে পারে। বিচ্ছিন্ন হতে পারে রেডিও ও জিপিএস যোগাযোগ।

 

সোলার ফ্লেয়ার আসলে কী? 

সূযের্র উপরিভাগে মাঝে মাঝে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়। তার ফলে মহাকাশের লক্ষ লক্ষ মাইলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশাল আগুনের শিখা। এই শিখার তাপমাত্রা ছাড়ায় কয়েক লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগুনের শিখা মূলত চাজর্যুক্ত ইলেকট্রন, প্রোটন কণার স্রোত যা আলোর বেগে ছুটে চলে। এ ছাড়া এর মধ্যে থাকে প্রচণ্ড শক্তিশালী রশ্মি। সৌরজগতের এই ঘটনাকে বলা হয় সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরঝলক। সূযের্র এই চাজর্যুক্ত কণিকাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়। যার ফলে হঠাৎ করে পৃথিবীব্যাপী রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় রাডার যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

Space.com ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, সূর্যের পিঠে যে বিশাল বিশাল কালো দাগ তৈরি হয় তাকে বলে সানস্পট বা সৌর কলঙ্ক। এরা অন্যান্য নক্ষত্রের চেয়ে ঠান্ডা হয়।

 

কীভাবে জন্মায় সৌর কলঙ্ক বা সানস্পট? 

সূর্যের ভিতরে, একেবারে কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সুবিশাল প্রাকৃতিক পরমাণু চুল্লি। এই চুল্লির থেকেই সূর্যের তেজ। প্রাকৃতিক সেই চুল্লির অনেক উপরে, সূর্যের পিঠের নীচে, প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার গভীরতায় একের পর এক চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এদের শক্তি অনেক কম। তবে কোনও ভাবে যদি তারা শক্তিশালী হয়ে উঠে, তা হলেই সূর্যের পিঠ বরাবর উঠে আসে এই চৌম্বক ক্ষেত্র। আর তখনই জন্ম নেয় সৌর কলঙ্ক বা সানস্পট। সব স্পটের রংই কালো বলে সানস্পটগুলি সূর্যের পিঠে কালো কালো দাগের জন্ম দেয়।

আর এর তীব্র চৌম্বকীয় ক্রিয়াকলাপের ফলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয়। ঝড়ের আকারে উদ্ভাসিত হয় এই শক্তি নির্গমন যা পরিচিত করোনাল মাস ইজেকশন (CME) নামে। এখন এই সিএমই-এর ফলাফল কী হবে তা পরিষ্কার বোঝা যায়নি। তবে সূর্যের ফটোস্ফিয়ার অঞ্চলে সৃষ্ট এই সানস্পটের আকার প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটার।

National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) জানাচ্ছে তীব্র সৌর ঝড়ে “মহাকাশে বৈদ্যুতিক স্রোতের ওঠানামা ঘটতে পারে এবং তা পৃথিবীর বিভিন্ন চৌম্বকীয় অঞ্চলে আটকে পড়া ইলেক্ট্রন ও প্রোটনগুলিকে শক্তি জোগাতে পারে।” তার জেরেই ব্যাহত হতে পারে রেডিও যোগাযোগ, প্রভাবিত হতে পারে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা।

Comments are closed.